Friday, 20 September 2024

হিমালয়

 


হিমালয় এশিয়ার একটি পর্বতমালা। এটি অনেকগুলো পর্বতের সমন্বয়ে গঠিত, যা তিব্বতীয় মালভূমি থেকে ভারতীয় উপমহাদেশকে পৃথক করেছে। ভূ-তত্ত্ববিদদের ধারণা অনুযায়ী, ভারতীয় প্লেট ও এশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষে হিমালয় সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বের তিনটি প্রধান নদী—সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গার উৎপত্তি হয়েছে এই পর্বতমালা থেকেই।


ভৌগোলিকভাবে হিমালয় পর্বত পাকিস্তানের গিলগিটে সিন্ধু নদী থেকে শুরু করে ভারত, তিব্বত, নেপাল, পূর্ব ভারত ও ভুটান হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদের দক্ষিণাঞ্চলীয় বাঁক পর্যন্ত বিপুল স্থলভাগজুড়ে রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু নদী, যেমন সিন্ধু, শতদ্রু, কালি, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র আড়াআড়িভাবে হিমালয়ের বুক চিরে ছুটে চলেছে। সিন্ধু ও শতদ্রু নদীর মধ্যবর্তী হিমালয়ের অংশটুকু পাঞ্জাব ও কাশ্মীর হিমালয় নামে পরিচিত (৫৬৩ কিমি)। শতদ্রু ও কালি নদীর মধ্যবর্তী পরবর্তী অংশটি কুমায়ূন হিমালয় (৩২২ কিমি) এবং কালি ও তিস্তা নদীর মধ্যবর্তী তৃতীয় অংশটি নেপাল হিমালয় নামে পরিচিত।


তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র মধ্যবর্তী চতুর্থ অংশটির নাম আসাম হিমালয় (৭২৪ কিমি)।


আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, চীন, নেপাল ও ভুটান এশিয়ার এই ছয় দেশে বিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালায় বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গগুলো অবস্থান করছে। হিমালয়ের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের নাম মাউন্ট এভারেস্ট। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গেরও মর্যাদা পেয়েছে।


নেপালি ভাষায় এর নাম সাগরমাথা আর তিব্বতিতে চোমোলাংমা। পর্বতটির চূড়া চীন ও নেপালকে আলাদা করেছে। ১৯৫৫ সালের ভারতীয় জরিপ অনুযায়ী এর উচ্চতা আট হাজার ৮৪৮ মিটার (২৯,০২৯ ফুট)।


১৯৫৩ সালে এডমন্ড হিলারি এবং নেপালের শেরপা তেনজিং নোরগে সর্বপ্রথম এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেন। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেন মুসা ইব্রাহীম।


এভারেস্ট পর্বতের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেটুও হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা আট হাজার ৬১১ মিটার (২৮,২৫১ ফুট)। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেটু জয় করেন ওয়াসফিয়া নাজরীন।


মাউন্ট এভারেস্ট ও কেটু ছাড়াও আট হাজার মিটারের বেশি বেশ কিছু পর্বত রয়েছে হিমালয়ে। এর মধ্যে কাঞ্চনজঙ্ঘা, মাকালু, ধবলগিরি, অন্নপূর্ণা পর্বত অন্যতম। সাত হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার পর্বত রয়েছে অর্ধশতাধিক।

Monday, 16 September 2024

কিভাবে অনলাইনে ইনকাম করা যায়?



 ঘরে বসে আয় করার নিশ্চিত উপায়

মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় ...

ব্লগিং করে আয় ...

ঘরে বসে গুগল অ্যাডসেন্স থেকে আয় ...

ঘরে বসে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় ...

ঘরে বসে হন ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট ...

ঘরে বসে ইউটিউব থেকে আয় ...

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করে ঘরে বসে আয় ...

কন্টেন্ট রাইটার/ আর্টিকেল লিখে আয় করুন।

Friday, 13 September 2024

অনলাইনে যেভাবে টাকা আয় করা যায়

 


প্রযুক্তি আমাদের জীবন ও কর্মে অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসছে। দুনিয়াজুড়ে বাড়ছে অনলাইন জগতের প্রতি নির্ভরতা। অনলাইনকে কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জনের নানান পথ তৈরি হয়েছে। এসব কাজ যেমন আরামদায়ক, তেমনি সৃজনশীলও বলা যায়। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গৃহিণী কিংবা নিয়মিত চাকরি করছেন—এমন ব্যক্তিরাও অনলাইনের মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারেন। বাংলাদেশে বসে অনলাইনে যেভাবে ডলার বা টাকা আয় করবেন, তা জানতে আমরা আলাপ করেছি তেমনই কিছু পেশাদার ব্যক্তির সঙ্গে। চলুন জেনে নিই কীভাবে অনলাইনে আয় করা যায়।


আধেয় বা কনটেন্ট তৈরি করে আয় করুন।


এক দশকের বেশি সময় ধরেই অনলাইনে বড় ধরনের টাকা আয়ের সুযোগ আছে। আপওয়ার্ক, ফাইবারসহ বিভিন্ন অনলাইন মার্কেট প্লেসে ঢুঁ মারতে পারেন কনটেন্ট-সংক্রান্ত সুযোগ দেখতে। এ ছাড়া ফেসবুক বা লিংকডইন থেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কনটেন্ট তৈরির কাজের খোঁজ পাবেন। স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মাহফুজ কায়সার বলেন, ‘এখন অনলাইনে নানান ধরনের কনটেন্টের চাহিদা। যে পরিমাণ চাহিদা, সেই পরিমাণ কনটেন্ট লেখক নেই। তাই নিজের মধ্যে সেই গুণ থাকলে কাজে লেগে পড়তে পারেন আপনিও। কনটেন্টের ধরনের ওপর নির্ভর করে আপনি সেখান থেকে পারিশ্রমিক পাবেন। সাধারণ ভিডিও চিত্রনাট্য তৈরি বা ফেসবুকে নিয়মিত লেখার মাধ্যমে, মাসে ১২ থেকে ১৬ হাজার টাকা আয় সম্ভব।


আইটি উদ্যোক্তা মাহামুদুল হাসান মাসুম বলেন, ‘ফ্রিল্যান্স ডিজাইন, সোশ্যাল মিডিয়া, রিমোট ডেটা এন্ট্রির মতো কাজ করে টাকা আয়ের সুযোগ আছে। এসব কাজের জন্য যে ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি হতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। আপনি চাইলে ইউটিউবের ভিডিও দেখেও প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। সাধারণ ল্যাপটপ ব্যবহার করেই এসব কাজ শুরু করা যায়।’


সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট।


এখন ফেসবুকের মাধ্যমে এফ–কমার্স বিস্তৃত হচ্ছে। আবার ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে বিভিন্ন ফ্যাশন ও ডিজাইননির্ভর উদ্যোগের বিকাশ ঘটছে। উদ্যোক্তারা এসব প্ল্যাটফর্মে নিজেদের পণ্য ও সেবা বিক্রির কারণে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে কাজের ও টাকা আয়ের সুযোগ আছে। নারী উদ্যোক্তা ও অনলাইন ফ্যাশন প্ল্যাটফর্ম অরাম বাংলাদেশের প্রধান নিশাত আনজুম বলেন, ‘আমাদের প্রায় ২৪ ঘণ্টাই ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে পণ্যের অর্ডার আসে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে পোস্ট, ছবি বা ভিডিও শেয়ারের বিষয়গুলো যেনতেনভাবে করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে তরুণেরা কাজ করতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে মাসে ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব ঘরে বসে।’


নিজের হাতের স্মার্টফোনটি ব্যবহার করেই আপনি সেসব সেরে নিতে পারবেন। কেউ কেউ আরও দক্ষ লোকবল খোঁজেন, যাঁদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো ফেসবুকের নানা পোস্ট তৈরি, পোস্ট আপলোড, কাস্টমারের সঙ্গে যোগাযোগ ইত্যাদি করেন। এসব পেজের ম্যানেজার হিসেবে ১৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করা কোনো ব্যাপার নয়।


ডিজাইন করে আয়ের সুযোগ।


যাঁদের তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন প্রশিক্ষণ আছে, তাঁরা ডিজাইননির্ভর সৃজনশীল কাজে মাসে ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। ক্যানভা বা অ্যাডোবি প্রিমিয়ার, ইনডিজাইনের মতো সফটওয়্যারের ব্যবহার জানা থাকলে বড় বড় প্রজেক্টেও কাজের সুযোগ থাকে। ইয়েলো র‍্যাপটর ডিজাইন স্টুডিওর সহপ্রতিষ্ঠাতা অনিন্দ্য আহমেদ বলেন, একটু দক্ষতা থাকলে ব্র্যান্ড ডিজাইন, ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন, থ্রিডি মডেল বা ক্যারেক্টার ডিজাইনের মতো কাজের মাধ্যমে আয়ের সুযোগ আছে।


আইটি উদ্যোক্তা জি এম আরাফাত আকবর বলেন, নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে কোর্স তৈরি করে তা অনলাইনে বিক্রি করা যায়। ডেটা এন্ট্রি ও অনলাইন কাস্টমার সাপোর্টের জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করা যায়। রিমোট জব, ফ্রিল্যান্সিং, আইটি বা আইটিইএস সার্ভিস বা সফটওয়্যার এক্সপোর্টের মতো কাজ জানা থাকলে অনলাইনে টাকা আয় করতে পারেন।



গিগ ইকোনমিতে যুক্ত হোন।


এখন তো প্রযুক্তিনির্ভর অ্যাপের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ হয়েছে। ফুড ডেলিভারি বা রাইড শেয়ারিংয়ের মতো সুযোগ বিস্তৃত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর অধ্যাপক ড. খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘অনলাইনের মাধ্যমে টাকা আয়ের অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে। অ্যাপনির্ভর বিভিন্ন সেবার জন্য রাইডার হিসেবে কাজের সুযোগ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি গিগ ইকোনমির পরিপ্রেক্ষিতে এমন অ্যাপনির্ভর সেবায় সেবা প্রদানকারী হিসেবে কাজ করতে পারেন। যাঁরা পেশাজীবী, গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালাতে পারেন, তাঁরা অ্যাপের মাধ্যমে রাইডশেয়ারিং সেবা দিতে পারেন।’ এসব কাজ করেও মাসে ১০ থেকে ২০ টাকার টাকা আয় করা যায় পড়াশোনার সময়টুকু বাঁচিয়ে।


ব্লগ তৈরি করে অ্যাফিলিয়েটিং মার্কেটিং করুন


পশ্চিমা দুনিয়ায় অ্যাফিলিয়েটিং মার্কেটিং ভীষণ জনপ্রিয়। বাংলাদেশে বসেও সেসব দেশের অ্যাফিলিয়েটিং মার্কেটিং করতে পারেন। অনলাইনে কোনো একটি নির্দিষ্ট পণ্যের ওপরে বিশদ লিখে সেই ব্লগ বা ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ই–কমার্সের পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখানো যায়। সেই বিজ্ঞাপন থেকে গ্রাহকেরা কোনো পণ্য কিনলে তখন আপনি নির্ধারিত অর্থ পাবেন। আপনি যে বিষয়ে জানেন কিংবা লিখতে পারেন, সেই বিষয়ে ব্লগ শুরু করতে পারেন। এখন দেশীয় অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানও অ্যাফিলিয়েটিং মার্কেটিং করছে। আপনি ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে অ্যাফিলিয়েটিং মার্কেটিং শুরু করতে পারেন।


ভিডিওতে অর্থ আয়ের সুযোগ।


এখন তো সবাই মোবাইলে ভিডিও তৈরি করতে পারেন বলা যায়। শুধু ভিডিও তৈরি নয়, মোবাইলে ভিডিও সম্পাদনার সুযোগ আছে। আপনার যে বিষয়ে আগ্রহ আছে, সেই বিষয়ে ভিডিও তৈরি করেও অর্থ আয়ের সুযোগ আছে। বিভিন্ন ভিডিও ইউটিউবসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে শেয়ারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অর্থ আয়ের সুযোগ আছে। ইউটিউবে চ্যানেল খুলে বা ফেসবুক থেকে ভিডিও বানিয়ে আয় করতে চাইলে অবশ্য শুরুতে আপনাকে কিছুটা পরিশ্রম করতে হবে; মানে লেগে থাকতে হবে। ভালো কনটেন্ট বানাতে পারলে দ্রুত আপনার ভিউ বাড়বে, আর আপনি ডলারে আয় শুরু করতে পারবেন। মধ্যম মানের ইউটিউবার হয়েও আপনি মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন ঘরে বসে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবার ভিডিও রিভিউ করে অর্থ আয় করা যায়। এসব কাজ যাঁরা করেন, নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁদের একজন বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য রিভিউ করার আগে একটা নির্দিষ্ট টাকার চুক্তি হয়। এভাবে মাসে ৫০ হাজার টাকাও আয় করা যায়।’


ভাড়া যখন নতুন আয়ের মাধ্যম।


এখন অনলাইনের মাধ্যমে এয়ারবিএনবি বা কাউচসার্ফিং ধারণা বেশ জনপ্রিয়। আপনার বাড়ি কিংবা ঘরের অব্যবহৃত অংশ অনলাইনে ভাড়া দিয়ে পর্যটক আকর্ষণ করতে পারেন। এতে বিদেশি পর্যটকেরা আপনার বাড়িতে আতিথেয়তা গ্রহণ করতে পারেন। এ ছাড়া আপনার কোনো সাইকেল বা ইলেকট্রনিক গ্যাজেট থাকলেও তা অনলাইনে ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারেন। এসব মাধ্যম থেকেও ভাড়া বাবদ ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন।


অনলাইন শিক্ষকতা।


অনেক বিদেশি বাঙালি আছেন, যাঁরা সন্তানদের বাংলা শেখাতে চান। আপনার উচ্চারণ ভালো হলে, আবৃত্তির নেশা থাকলে এ কাজ করে আপনি পেতে পারেন ৩০ থেকে ৭০ হাজার টাকাও। অনলাইনে বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্র পড়িয়েও ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করা যায়।


জ্যামের শহরে বাইরে না বেরিয়ে টাকা আয়ের এ সুযোগ কাজে লাগাবেন নাকি?

উত্তরে হ্যাঁ বা না লিখুন। 



কিভাবে অনলাইনে টাকা আয় করতে পারবেন বাংলাদেশে (২০২৪)?

 


সহজে টাকা ইনকাম বা আয় করার উপায়

টাকা ইনকাম করার সহজ উপায় বাংলাদেশে কি কি আছে তা অনেকেই জানতে চান। এমন অনেক লোক আছেন যারা ছাত্র থাকাকালীন বাংলাদেশে ঘরে বসে অনলাইনে টাকা আয় করার মাধ্যমে নিজের ব্যয় পরিচালনা করতে চান। আবার অনেকে বাংলাদেশের সেরা অনলাইন আর্নিং সাইট কোনটি বা কোনও খরচ ছাড়াই অনলাইনে কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায় বা কীভাবে অর্থ উপার্জন করতে হয়; সে সম্পর্কে জানতে চান।


আপনি যদি ছাত্রদের জন্য অনলাইনে আয় বা শিক্ষার্থীদের জন্য কোন বিনিয়োগ ছাড়াই অনলাইনে কীভাবে ফ্রি টাকা ইনকাম করা যায় বা ঘরে বসে কিভাবে সহজে টাকা আয় করা যায়, সে ব্যাপারে জানতে আগ্রহী এবং বাংলাদেশের অনলাইন উপার্জনকারী সাইটগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে উদগ্রীব, তবে আপনি সঠিক জায়গায় আছেন। আপনি কি টাকা ইনকাম করার ওয়েবসাইট খুঁজছেন? তাহলে অনলাইনে ইনকাম বাংলাদেশী সাইট অথবা অনলাইন ইনকাম সাইট লিখেও গুগোল সার্চ করতে পারেন।


কিভাবে অনলাইনে অর্থ উপার্জন করতে হয় তার সম্পূর্ণ গাইড অনুসরণ করে অনলাইনে ইনকাম করার উপায় জেনে আপনিও সহজেই বাংলাদেশে অনলাইনে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। অনেকে ঘরে বসে টাকা আয় করতে চাই বলে গুগোলে সার্চ করে থাকেন; কিভাবে টাকা আয় করা যায় অথবা টাকা উপার্জন করা যায়, সেই আলোচনাই থাকছে আজকের পর্বে।.....! 

দক্ষতা ছাড়াই ঘরে বসে অনলাইনে ইনকাম

 


গেম খেলা: আপনি গেম খেলেও কয়েকটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল Mistplay, Lucktastic, Swagbucks এবং Second Life। এর মধ্যে কিছু সাইট PayPal বা গিফট কার্ডের আকারে আপনাকে অর্থ প্রদান করবে।


মতামত শেয়ার: আপনি বাড়িতে থেকেই বেশ কিছু সাইটের অনলাইন সার্ভেতে অংশ নিয়ে খুব সহজেই টাকা রোজগার করতে পারবেন। Google Opinion Rewards, Poll Pay-এর মতো অ্যাপগুলো আপনাকে এই কাজে সাহায্য করবে।


পুরনো গিফট কার্ড বিক্রি করুন: আপনার কাছে যদি কিছু পুরনো গিফট কার্ড থেকে থাকে তাহলে সেগুলি বিক্রি করেও অনলাইনে টাকা রোজগার করতে পারেন। আপনার কাছে জমে থাকা গিফট কার্ডগুলিকে CardCash-এর মাধ্যমে অনলাইনে বিক্রি করে আপনি লোভনীয় ক্যাশব্যাক পেয়ে যেতে পারেন।


কোন ফোকাস গ্রুপে যোগ দিন: টাকা রোজগারের জন্য কোনো ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট টেস্টিং বা ফোকাস গ্রুপে যোগদান করুন। অনলাইনে অর্থ উপার্জনের জন্য FocusGroup.com, User Interviews, এবং Respondent.io-এর মতো গ্রুপগুলো রয়েছে।


ছবি বিক্রি: আপনার সংগ্রহে যদি পুরনো বা নতুন ছবি থেকে থাকে, তাহলে আপনি সেই ছবি স্টক ফটোগ্রাফি ওয়েবসাইটে বিক্রি করতে পারেন, যারা সবসময় বিভিন্ন ধরনের ছবি কেনে। আপনি Getty Images, Shutterstock-এর মতো জনপ্রিয় স্টক ফটোগ্রাফি সাইটগুলিতে ছবি আপলোড করতে পারেন। সাইট থেকে আপনার ফটোগুলি বিক্রি হওয়া মাত্রই তারা আপনার কাছে টাকা পৌঁছে দেবে।


অনলাইনে আয় করার নানা সুযোগ থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতারণার মুখে পড়তে হতে পারে। অনলাইনে কাজ করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই এ ধরনের প্রতারণামূলক কাজের ক্ষেত্র থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে হবে।

Tuesday, 10 September 2024

Make money online in 2024



 There has never been an easier time to make money outside of a regular job, than in 2024. The opportunities and AI-powered tools that are available to freelancers and others seeking to make money online are endless—and you can do it, even with inflation and the rising costs of living.



Regardless of one's skill set, there is literally something to suit every professional. From the comfort of your laptop, you can do work that is highly flexible and can be performed on the go, or in between your regular job. And if you work remotely in your main job, you have even more time which you can dedicate to making money online.



However it's important to remember that there is no such thing as "get rich quick." Any scheme or website that promises you the ability to make money fast as an absolute guarantee, is most likely a scam. To make a considerable amount of money, you need to ensure you put your research and expertise to work, just like with any other job.



When looking for ways to make money online, be cautious and watch out for scammers. Never concede to sharing sensitive or personal financial information, unless of course you are using a legitimate freelance site such as Upwork, for example. And remember, if it sounds too good to be true, trust your gut—it most likely is.



With that caveat in mind, below is a list of 10 of the best side hustle opportunities that enable you to make money from home, according to research and analysis of sites including Upwork and Shopify.



1.

(Start Affiliate Marketing)

Affiliate marketing is an excellent way to create a passive income stream, and it works best when you have a solid content marketing strategy. To get started, write or record video content on something you're passionate about, and build a strong audience and following first.



The ideal number of followers and repeat content viewers you need will depend on the platform you're using, and the requirements of the brands you will be acting as an affiliate for. You can incorporate affiliate links across your website, and/or social media accounts.



But you'll need to ensure that the products you are promoting are ones that actually resonate with your audience. Otherwise, you are spamming them and delivering low value, and people will easily be able to read through it, which reduces your credibility because you're wasting their time.



2.

(Launch A Dropshipping Store)

Dropshipping is an excellent way to make money in your free time while working from home, mostly due to its convenience in selling products without ever needing to store inventory. You can set up a store on a platform such as Shopify, for example, and you would merely be responsible for developing the business model so that you can attract and engage customers, and of course, make sales.



Your suppliers would ship the product directly to your customers, so this takes away the need for purchasing storage space or piling up your garage with items. This model is also highly flexible as you can quickly adapt to market changes with minimal loss.



3.

(Make Money As A Social Media Influencer)

The global influencer marketing market size has more than tripled since 2019, hitting a record estimate of $24 billion in 2024. This can be attributed to the rise of online and social media usage during and after the pandemic.



With more than half of the global population having social media accounts, it only makes sense for avid marketers to collaborate and establish partnerships with social media influencers as part of their brand and product awareness campaigns. This is where you would come in.



To begin with, you need is a strong passion or interest, and your personality. Create a unique personal brand on a platform such as YouTube, TikTok, or Instagram, and as your follower count grows, your social media presence and social capital will become more valuable to brands looking to partner with you. You can eventually join influencer platforms where brands are looking for partnerships, such as Aspire.io, or Open Influence.



4.

(Become An Online Tutor)

The online tutoring market is projected to reach $21.8 billion by 2030, so it's clear to see that demand for online tutors is on the incline. As an online tutor, you can teach any in-demand subject using video-conferencing tools, and even join freelance teaching platforms to create a profile and advertize your services.



5.

(Edit And Proofread AI Content)

Not too long ago, content writing, editing, and proofreading was touted as an excellent way to make money online. However, the state of things has changed considerably because of AI, and now there are AI tools which can generate content easily and within seconds, such as Jasper AI or ChatGPT, which means anyone relying on this as a side hustle is at risk of being replaced. However, even these tools do have their limitations and, used on their own, can be factually inaccurate, have grammatical errors, or appear to be unnatural and robotic.



As an AI content proof-reader or editor, you can fact-check content that has been generated by AI, for business clients, and soften the tone so it reflects their brand voice and is free from error.



Below is another five ideas you can explore to make money online:



Write and self-publish e-books



Launch a podcast and get sponsorships/sell advertizing space



Become a virtual assistant



Sell crafts and handmade items on Etsy



Deliver consulting services



Ultimately, boosting your income online isn't at all difficult to achieve. Find a section of your market that is underserved, and make your mark. With your internet and laptop, you can develop new skills, share them with the world, and make more money in the process.

Monday, 9 September 2024

অনলাইনে টাকা ইনকাম করার গুরুত্বপূর্ণ ১০ টি উপায়।


অনলাইনে টাকা ইনকাম করার গুরুত্বপূর্ণ ১০ টি উপায়।

বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুব সহজেই অনলাইনে টাকা ইনকাম করা সম্ভব হচ্ছে। অনলাইনে টাকা ইনকাম করার জন্য বেশ কিছু উপায় বা মাধ্যম অনেক উপায় বা মাধ্যম। অনলাইনে ইনকামের রাস্তা প্রত্যেকের জন্য অবশই খোলা রয়েছে। কেবল প্রয়োজন হবে, কিছু সাধারণ কৌশল ও দক্ষতা। এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে ২০২৪ সালে এসে কার্যকরী অনলাইনে টাকা ইনকাম করার ১০ টি উপায় সম্পর্কে বলবো।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই মানুষ ভালো পরিমানের একটি অর্থ অনলাইন থেকে উপার্জন করছে। 

বাংলাদেশে অনলাইন ইনকাম এর বিষয়টি সমাজের কাছে নতুন একটি বিষয় হলেও এটি কিন্তু সারা পৃথিবীতে শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। তাই বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মতোই বাংলাদেশ ও লাখ লাখ মানুষ অনলাইন ইনকামের উপর নির্ভরশীল।

স্বাধীনভাবে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ কিন্তু কম পেশায় পাওয়া যায়। অনলাইনে আয় উপার্জন এবং খুব স্বাধীনভাবেই নিজের ক্যারিয়ার গড়া যায়। এর জন্য বিশেষ কিছুই প্রয়োজন হবে না। ধৈর্য এবং মেধা কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই কোনো কাজে দক্ষ হয়ে সেটা থেকে নিয়মিত ইনকাম করা যাবে।

অনলাইনে আয় করার জন্য কোন নির্দিষ্ট বয়স, লিঙ্গ এর প্রয়োজন নেই। নেই নির্ধারিত কাজ করার স্থান এবং সময়। যে কোন সেক্টর থেকে আয় করা সম্ভব। ছাত্র-ছাত্রী কিংবা গৃহিণী কিংবা চাকরিজীবী যাই হোক না কেন, যে কেউ অনলাইনে ইনকাম করতে পারবে।

 ইন্টারনেট কানেকশন, ডিজিটাল ডিভাইস এবং কাজ করার ইচ্ছা থাকলেই সম্ভব হয়ে যাবে অনলাইনে আয় করা। এই আর্টিকেলটিতে আমরা কিভাবে অনলাইনে অসম্ভব সেই সকল বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ঘরে বসে কাজ করে অনলাইনে টাকা আয় করার উপায় গুলো হলো,



১.

কনটেন্ট রাইটিং।

আপনি যদি লেখালেখিতে পারদর্শী হয়ে থাকেন এবং ঘরে বসে পার্ট-টাইম টাকা ইনকাম করার উপায় খুঁজছেন, তাহলে কনটেন্ট রাইটিং এর কাজটি আপনার জন্য।

বর্তমান সময়ে প্রচুর অনলাইন ব্লগ, বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং নিউস পোর্টাল ইত্যাদি রয়েছে যেখানে আর্টিকাল লেখার কাজ দেওয়া হয়। কন্টেন রাইটিং এ প্রায় ১৪০০ থেকে ১৫০০ ওয়ার্ড এর একটি ভালো কোয়ালিটির আর্টিকেল লিখে দিতে পারলে আপনি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ইনকাম করতে পারবেন।



২.

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং। 

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি পার্ট বা অংশ। সোশ্যাল মিডিয়া অর্থাৎ ফেইসবুক,ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি তে যে সমস্ত লোকজন বা কাস্টমার রয়েছে তাদের কাছে পণ্য বা ব্যবসা কে প্রচার প্রসার করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ইমেজ ভিডিও এবং অডিও আপলোড করতে হয়। 

যার ফলে কাস্টমাররা এসকল ভিডিও ইমেজ বা অডিও শুনে একটি কোম্পানির প্রোডাক্ট ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা পায়। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং জানা থাকলে ঘরে বসে অনেক টাকা আয় করা সম্ভব।



৩.

ব্লগিং। 

বিশ্বজুড়ে লক্ষ লোকেরা প্রফেশনালী ব্লগিং করে অনলাইনে নিয়মিত আয় করছেন এবং সঠিক ভাবে করলে ব্লগিং থেকে যেকোনো সাধারণ চাকরির তুলনায় প্রচুর টাকা ইনকাম করা সম্ভব। বর্তমানে এটি একটি সেরা অনলাইন জব যেটাকে ছাত্রছাত্রী থেকে গৃহিনী বা যেকোনো ব্যক্তি শুরু করতে পারবেন।

কারন একটি ব্লগ থেকে ইনকাম করার ক্ষেত্রে সেখানে প্রত্যেক দিন কমেও ১০০০ ইউসার বা ভিসিটর আসতেই হয়। তাই ব্লগিং অনলাইনে আয় এর একটি অন্যতম মাধ্যম।



৪.

ইউটিউব চ্যানেল। 

ইউটিউবে ইনকাম করার জন্য আপনাকে নিজের একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করতে হবে এবং সেখানে নিয়মিত ভাবে ভিডিও তৈরি করে আপলোড করতে হবে। রুচি এবং অভিজ্ঞতা হিসেবে যেকোনো ধরণের ভিডিও তৈরি করে আপলোড করতে পারবেন। 

চ্যানেলে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিউস এবং সাবস্ক্রাইবার হতে থাকবে তখন গুগল এডসেন্স, পেইড প্রমশন এবং আফিলিয়েট মার্কেটিং ব্যবহার করে ঘরে বসে বা যেকোনো জায়গার থেকে এই অনলাইন ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন।

একটি লাপটপ বা ডেস্কটপ দিয়ে কাজ করাটা সুবিধাজনক যদিও আপনি চাইলে নিজের মোবাইল থেকে কাজ করেও ইউটিউব থেকে আয় করতে পারবেন।



৫.

গ্রাফিক ডিজাইনিং। 

আপনি যদি গ্র্যাফিক্স ডিজাইনিং বা লোগো তৈরি করা ইত্যাদি এই ধরণের দক্ষতায় পারদর্শী হয়ে থাকেন তাহলে অবশই এর মাধমেও ইনকাম সম্ভব।

অনলাইনে প্রচুর ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া রয়েছে যেখানে অনলাইন পোর্টাল গুলোর জন্য বিভিন্ন ধরণের গ্রাফিক ডিজাইনিং এর কাজ করানোর জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইনার এর প্রয়োজন হয়। যদি আপনি এই কাজে ভালো অভিজ্ঞতা রাখেন, তাহলে অবশ্যই কাজটি করে খুব সহজে আয় করতে পারবেন।



৬.

ওয়েবসাইট ডেভেলপার।

বর্তমানে ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট এবং ডিজাইনিং একটি জনপ্রিয় চাহিদা সম্পন্ন কাজ। আপনার যদি ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট এবং ডিজাইনিং যে জ্ঞান, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই অন্যদের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করে টাকা আয় করতে পারবেন।

বিভিন্ন ধরণের ব্লক সাইট, পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট বা ই কমার্স ওয়েবসাইটই ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট এর কাজ পেয়ে যেতে পারবেন।



৭.

ডিজিটাল মার্কেটিং।

বর্তমান যুগে ডিজিটাল মার্কেটিং অনলাইন ইনকামের একটি ব্যাপক জায়গা জুড়ে আছে। এই ধরণের অনলাইন মার্কেটিং এর কাজ সবাই করতে পারেননা। আর এজন্যই এই কাজে প্রচুর ইনকাম করার সুযোগ থাকে।

অনলাইনে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং এর এর বিভিন্ন ভাগ রয়েছে যেমন, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং, ইউটিউব মার্কেটিং ইত্যাদি। একটি ল্যাপটপ এবং ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই আপনি যেকোনো জায়গায় বসে কাজ করতে পারবেন।



৮.

ডাটা এন্ট্রি জব।

অনলাইনে ডাটা এন্ট্রি করে টাকা আয় করার জন্য প্রচুর ডাটা এন্ট্রি সাইট রয়েছে। ইন্টারনেটে সার্চ করলেই আপনারা প্রচুর ডাটা এন্ট্রি ওয়েবসাইট পাবেন যেগুলোর থেকে টাকা আয় করা সম্ভব।

এই কাজগুলো ফুল-টাইম বা পার্ট-টাইম দুধরণেই হয়ে থাকে। ডাটা এট্রির কাজ করার জন্য একটি ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ থাকতে হবে।



৯.

এফিলিয়েট মার্কেটিং।

বর্তমান সময়ে একটি অনলাইন কাজ যার মাধ্যমে আনলিমিটেড টাকা ইনকাম করা যাবে সেক্ষেত্রে এফিলিয়েট মার্কেটিং অন্যতম। এটা হলো এমন একটি অনলাইন ব্যবসা যেখানে আপনি বিভিন্ন ই কমার্স গ্রুপ গুলো থেকে টাকা ইনকাম করেন। 

এই প্রক্রিয়াতে আপনাকে একটি অনলাইন কোম্পানির এফিলিয়েট প্রোগ্রাম এর সাথে যুক্ত হতে হয় এবং সেই কোম্পানির পণ্য বা সেবা গুলোকে আপনাকে নিজের অনলাইন প্লাটফর্ম গুলোতে শেয়ার করতে হয়।



১০.

কোডিং।

যদি আপনার কাছে কোডিং এর ভালো জ্ঞান,দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা আছে তাহলে আপনি একজন ডেভলপার প্রোগ্রামার এবং এনালাইসিস হিসেবে অনলাইনে কাজ করতে পারেন এবং কাছ থেকে টাকা আয় করতে পারে। 

অনলাইনে এমন অনেক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলো রয়েছে যেগুলোতে বিভিন্ন কোডিং এর কাজ পাবেন। একজন প্রফেশনাল কোডার হিসেবেও আপনি ঘরে বসে অনলাইনে টাকা আয় অবশই করতে পারবেন।

ঘরে বসে অনলাইনে ইনকাম করার ওয়েবসাইট।

ঘরে বসে অনলাইনে ইনকাম করার জন্য বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট রয়েছে। যেগুলোতে খুব সহজেই দক্ষতা অনুযায়ী বিভিন্ন কাজ পাওয়া যায় এবং টাকা আয় করা সম্ভব।



ঘরে বসে অনলাইনে ইনকাম করার ওয়েবসাইট গুলো দেওয়া হলো,

১.

লিংকডিন।


২.

ফ্রিল্যান্সার ডটকম।


৩.

ফাইবার। 


৪.

আপ ওয়ার্ক।


৫.

পিপল পার আওয়ার ইত্যাদি। 



পরিশেষে বলা যায়, বিশ্বজুড়ে অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশও অনলাইন থেকে আয় উৎস এবং আয় করা মানুষদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অনলাইনে আয় করা কোন কঠিন বিষয় নয়। যোগ্যতা,দক্ষতা এবং ধৈর্য থাকলে যে কেউ অনলাইনে খুব সহজেই ঘরে বসে কাজ করে টাকা ইনকাম।

Sunday, 8 September 2024

কোন ইনভেস্ট ছাড়াই ঘরে বসে মাসে ১ লক্ষ টাকা ইনকাম।

 কোন ইনভেস্ট ছাড়াই ঘরে বসে মাসে ১ লক্ষ টাকা ইনকাম।




প্রযুক্তি আমাদের জীবন ও কর্মে অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসছে। দুনিয়াজুড়ে বাড়ছে অনলাইন জগতের প্রতি নির্ভরতা। অনলাইনকে কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জনের নানান পথ তৈরি হয়েছে। এসব কাজ যেমন আরামদায়ক, তেমনি সৃজনশীলও বলা যায়। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গৃহিণী কিংবা নিয়মিত চাকরি করছেন—এমন ব্যক্তিরাও অনলাইনের মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারেন। বাংলাদেশে বসে অনলাইনে যেভাবে ডলার বা টাকা আয় করবেন, তা জানতে আমরা আলাপ করেছি তেমনই কিছু পেশাদার ব্যক্তির সঙ্গে। চলুন জেনে নিই কীভাবে অনলাইনে আয় করা যায়।



আধেয় বা কনটেন্ট তৈরি করে আয় করুন



এক দশকের বেশি সময় ধরেই অনলাইনে বড় ধরনের টাকা আয়ের সুযোগ আছে। আপওয়ার্ক, ফাইবারসহ বিভিন্ন অনলাইন মার্কেট প্লেসে ঢুঁ মারতে পারেন কনটেন্ট-সংক্রান্ত সুযোগ দেখতে। এ ছাড়া ফেসবুক বা লিংকডইন থেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কনটেন্ট তৈরির কাজের খোঁজ পাবেন। স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মাহফুজ কায়সার বলেন, ‘এখন অনলাইনে নানান ধরনের কনটেন্টের চাহিদা। যে পরিমাণ চাহিদা, সেই পরিমাণ কনটেন্ট লেখক নেই। তাই নিজের মধ্যে সেই গুণ থাকলে কাজে লেগে পড়তে পারেন আপনিও। কনটেন্টের ধরনের ওপর নির্ভর করে আপনি সেখান থেকে পারিশ্রমিক পাবেন। সাধারণ ভিডিও চিত্রনাট্য তৈরি বা ফেসবুকে নিয়মিত লেখার মাধ্যমে, মাসে ১২ থেকে ১৬ হাজার টাকা আয় সম্ভব।



আইটি উদ্যোক্তা মাহামুদুল হাসান মাসুম বলেন, ‘ফ্রিল্যান্স ডিজাইন, সোশ্যাল মিডিয়া, রিমোট ডেটা এন্ট্রির মতো কাজ করে টাকা আয়ের সুযোগ আছে। এসব কাজের জন্য যে ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি হতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। আপনি চাইলে ইউটিউবের ভিডিও দেখেও প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। সাধারণ ল্যাপটপ ব্যবহার করেই এসব কাজ শুরু করা যায়।’

Sunday, 1 September 2024

একটি গর্হিত বিদআত ও মারাত্মক বিকৃতি : ইসলামে কি তৃতীয় কোনো ঈদ আছে।


প্রচলিত ভুল

একটি গর্হিত বিদআত ও মারাত্মক বিকৃতি : ইসলামে কি তৃতীয় কোনো ঈদ আছে

অনেক সময় সাধারণ মানুষের আবেগ-অনুভূতির দিকে লক্ষ্য করে কিংবা কোনো বাস্তবতা বোঝানো কঠিন মনে হলে অনেকে চুপ থাকার পথ বেছে নেন। অথবা দু’ একবার বলে চুপ হয়ে যান। এটা এ কারণে অনুচিত যে, এতে প্রকৃত বিষয় মানুষের অজানা থেকে যাবে এবং ভুল কথা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।


ঈদ ইসলামের শাখাগত বিষয় নয়। এটি দ্বীনের ‘শিআর’ তথা প্রতীকের অন্তর্ভুক্ত এবং এমন একটি বিষয়, যা সম্পূর্ণরূপে শরীয়তের নির্ধারণ ও নির্দেশনার উপর নির্ভরশীল


 (أمر تعبدي وتوقيفي )। অর্থাৎ এটি শুধু বিবেকবুদ্ধি ও কিয়াস দ্বারা অনুধাবন করা যায় না। সরাসরি শরীয়তদাতার পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট আদেশ দ্বারাই বিধিত হয়। এজন্য সুন্নতে মুতাওয়ারাসা, স্পষ্ট হাদীস ও ইজমায়ে উম্মতের বিপরীতে তৃতীয় ঈদ আবিষ্কার করা বিদআতই হবে।


আর এখন তো বিষয়টি শুধু এই নয় যে, একটি বিদআতকে সুন্নতের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে সম্মিলিতভাবে উদযাপন করা হচ্ছে; বরং এটিকে বানানো হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহববতের মাপকাঠি ও প্রতীক। অথচ শরীয়ত বলে সুন্নাহর অনুসরণ, উসওয়ায়ে হাসানাহ অনুযায়ী জীবনযাপন, সুন্নতকে যিন্দা করা ও বিদআত নির্মূল করার মেহনত হচ্ছে মুহববতের মাপকাঠি ও নিদর্শন।


সাদাচোখে এটি কারো কাছে সামান্য বিষয় মনে হলেও বাস্তবে তা একটি মারাত্মক চিন্তাগত বিকৃতি। আর এই নবআবিষ্কৃত ‘ঈদ’কে জশনে জুলুস আকারে পালন করতে গিয়ে যেসব গর্হিত কাজ, আচরণ ও ভিত্তিহীন বর্ণনার আশ্রয় নেওয়া হয় সে বিষয় তো রইলই।


মনে রাখা উচিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হকসমূহ আদায় করা থেকে উদাসীন হয়ে অন্যায় পন্থায় হক আদায়ের বাহানার দ্বারা নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়া নিজের প্রতি ও গোটা উম্মতের প্রতি মারাত্মক জুলুম। আল্লাহ তাআলার নিকট দাবি নয়, আমল গ্রহণযোগ্য। বাহ্যিক চাকচিক্য নয়, অন্তরের তাকওয়াই তাঁর নিকট পৌঁছে। বিদআত নয়, শুধু সুন্নতই তাঁর নিকট বরণীয়।


একটু ভেবে দেখুন, যে নাসারাদের পথ থেকে আমরা সূরায়ে ফাতিহায় প্রতিদিন কমপক্ষে বিশবার আল্লাহ তাআলার নিকট ولا الضالين বলে আশ্রয় প্রার্থনা করি তাদের থেকে নেওয়া রসম-রেওয়াজে কি উম্মতের কোনো কল্যাণ থাকতে পারে?


اهدنا الصراط المستقيم، صراط الذين انعمت عليهم غير المغضوب عليهم ولا الضالين


 

তাঁরা নবীজীকে ভালবাসতেন প্রাণের চেয়েও বেশি।


সৃষ্টির ওপর সবচেয়ে বেশি দয়া ও অনুগ্রহ আল্লাহ তাআলার। তাঁর রহমত ও ইহসানের অন্ত নেই। তাঁর পরে মানুষের ওপর বেশি ইহসান ও অনুগ্রহ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। পুরো পৃথিবী যখন ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, অন্যায়-অনাচার, জুলুম-নির্যাতন, মূর্খতা-বর্বরতা ও কুফর-শিরকে পূর্ণ ছিল, দয়াময় আল্লাহ সেই সময় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হিসেবে প্রেরণ করলেন।


নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওতের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের হেদায়েত ও সফলতা, শান্তি ও মুক্তির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। বহু কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন। প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে মদীনা হিজরত করেছেন। জিহাদ করেছেন। তবু তিনি নিরাশ বা বিরক্ত হননি, বরং নিরলস চেষ্টা চালিয়ে গেছেন এবং চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে দুআ করেছেন।


আল্লাহ তাআলা তাঁর মাধ্যমে অন্ধকার দুনিয়াকে আলোর সন্ধান দিলেন। দিকভ্রান্ত পৃথিবীকে হেদায়েতের দিশা দিলেন। মানুষকে শিক্ষা দিলেন সত্যিকারের মনুষ্যত্ব, মানবতা, সভ্যতা, রুচি ও বোধের স্বচ্ছতা, নৈতিক ও চারিত্রিক পবিত্রতা এবং ঈমান ও তাওহীদের বিশুদ্ধতা।


এজন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বত ও ভালবাসা ঈমানের অংশ। তাঁর ভালবাসা ছাড়া ঈমান অপূর্ণ। ঈমানের স্বাদ আস্বাদনের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সবচেয়ে প্রিয়রূপে গ্রহণ করতে হবে। নবীজীর পাক যবানেই ইরশাদ হয়েছে।


ثَلَاثٌ مَنْ كُنّ فِيهِ وَجَدَ بِهِنّ حَلَاوَةَ الْإِيمَانِ: مَنْ كَانَ اللهُ وَرَسُولُهُ أَحَبّ إِلَيْهِ مِمّا سِوَاهُمَا.


তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকবে, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে। তার মধ্যে প্রথমটি হল, যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সবচেয়ে প্রিয় হবে। সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৭


নবীজী আরো ইরশাদ করেন


لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ.


তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না; যতক্ষণ আমি তার কাছে পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও অন্যান্য সকল মানুষ থেকে বেশি প্রিয় না হব। সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫


নবীজী আরো বলেন


لَا، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْكَ مِنْ نَفْسِكَ.


ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি তোমার কাছে তোমার জানের চেয়েও অধিক প্রিয় না হব। সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৬৩২


নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সাহাবায়ে কেরামের মহব্বত এমনই ছিল। তারা নবীজীকে মা-বাবা, সন্তান-সন্ততি এমনকি প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসতেন। তাদের গোটা জীবনই ছিল নবী-প্রেমের প্রতিচ্ছবি। ইবাদত-বন্দেগী, লেনদেন, চলাফেরা, আখলাক-চরিত্র সর্বত্র ছড়িয়েছিল নবী-প্রেমের জ্যোতি। নবী- প্রেমে নিমজ্জন তাদের জীবন-জগতকে করেছিল জ্যোর্তিময়-আলোকিত। নবী-প্রেমের যে দৃষ্টান্ত তারা স্থাপন করে গেছেন, মানব ইতিহাসে তার নজির নেই। কাফেররা পর্যন্ত তা স্বীকার করেছেন।


একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের নিয়ে উমরার উদ্দেশে মক্কার পথে রওনা হন। এ কথা শুনে কুরাইশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। মুসলিমদের বাধা দেওয়ার জন্য বাহিনী প্রেরণ করে। হুদায়বিয়া নামক স্থানে আলাপ-আলোচনার জন্য তাদের একাধিক প্রতিনিধি নবীজীর কাছে আসে। তাদের একজন হলেন উরওয়া ইবনে মাসঊদ, যিনি তখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি। নবীজীর সঙ্গে আলোচনার সময় সাহাবীদের অবস্থা দেখে কুরাইশের কাছে গিয়ে তিনি এই অনুভূতি ব্যক্ত করেছিলেন


وَاللهِ لَقَدْ وَفَدْتُ عَلَى المُلُوكِ، وَوَفَدْتُ عَلَى قَيْصَرَ، وَكِسْرَى، وَالنّجَاشِيِّ، وَاللهِ إِنْ رَأَيْتُ مَلِكًا قَطّ يُعَظِّمُهُ أَصْحَابُهُ مَا يُعَظِّمُ أَصْحَابُ مُحَمّدٍ مُحَمّدًا، وَاللهِ إِنْ تَنَخّمَ نُخَامَةً إِلّا وَقَعَتْ فِي كَفِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ، فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ، وَإِذَا أَمَرَهُمْ ابْتَدَرُوا أَمْرَهُ، وَإِذَا تَوَضَأَ كَادُوا يَقْتَتِلُونَ عَلَى وَضُوئِهِ.


আমি অনেক রাজা-বাদশার কাছে প্রতিনিধি হয়ে গিয়েছি। কায়সার, কিসরা ও নাজাশীর কাছেও গিয়েছি। আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে তার সঙ্গীরা যেভাবে ভক্তি করে, সেভাবে আমি আর কাউকে দেখিনি তাদের বাদশাহকে ভক্তি করতে। আল্লাহর কসম! তিনি থুথু ফেললেই তাদের কেউ না কেউ তা হাতে নিয়ে নেয় এবং তা চেহারা ও শরীরে মাখে। তিনি যখন তাদেরকে আদেশ করেন তখন তারা তার আদেশ পালনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর যখন তিনি ওযু করেন তখন তার ওযুর ব্যবহৃত পানি পাওয়ার জন্য লড়াই করার উপক্রম হয়। সহীহ বুখারী, হাদীস ২৭৩১


নবীজীর প্রতি সাহাবায়ে কেরামের ভালবাসার ঘটনাবলি হাদীস, সীরাত, তারীখ ও তারাজিমের কিতাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের মতো নবী-প্রেমে ডুবে আমরাও হতে পারি আলোকিত মানুষ। এখানে আমরা নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত সাহাবীগণের নবী-প্রেমের কিছু ঘটনা উল্লেখ করছি।


১. খলীফাতুর রাসূল আবু বকর সিদ্দীক রা. মৃত্যুশয্যায় শায়িত। এ অবস্থায় তাঁর প্রিয় কন্যা নবীপত্নী আয়েশা রা. এলেন। তিনি মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন্ দিন ইন্তেকাল করেছেন?


আয়েশা রা. বললেন, সোমবার।


তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আজ কী বার?


আয়েশা রা. বললেন, সোমবার।


খলীফাতুর রাসূল বললেন


أَرْجُو فِيمَا بَيْنِي وَبَيْنَ اللّيْلِ.


আমি আশা করি, এখন থেকে রাতের মধ্যে আমার মৃত্যু হবে। সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৮৭


এ থেকে অনুমান করা যায়, আবু বকর রা. নবীজীকে কত ভালবাসতেন, যার ফলে তিনি আকাক্সক্ষা করেন, নবীজীর মৃত্যু যে দিন হয়েছে তাঁর মৃত্যুও যেন সে দিনই হয়।


২. আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন


يَا رَسُولَ اللهِ! وَاللهِ إِنَّكَ لَأَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ نَفْسِي، وَإِنَّكَ لَأَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَهْلِي، وَأَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ وَلَدِي، وَإِنِّي لَأَكُونُ فِي الْبَيْتِ فَأَذْكُرُكَ فَمَا أَصْبِرُ حَتَّى آتِيَكَ فَأَنْظُرَ إِلَيْكَ، وَإِذَا ذَكَرْتُ مَوْتِي وَمَوْتَكَ عَرَفْتُ أَنَّكَ إِذَا دَخَلْتَ الْجَنَّةَ رُفِعت مَعَ النَّبِيِّينَ، وَإِنِّي إِذَا دَخَلْتُ الْجَنَّةَ خَشِيتُ أَنْ لَا أَرَاكَ.


ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি আপনি আমার স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি এমনকি প্রাণের চেয়েও বেশি প্রিয়। আমি যখন ঘরে থাকি এবং আপনার কথা স্মরণ হয় তখন আপনাকে না দেখা পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে পারি না। আর যখন আমার ও আপনার মৃত্যুর কথা স্মরণ হয় তখন আমি বুঝি, আপনি জান্নাতে নবীদের সঙ্গে উঁচু মাকামে থাকবেন। আর আমি জান্নাত পেলেও ভয় হয়Ñ আপনাকে দেখতে পারব কি না। আলমুজামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ৪৮০


নবীজীর প্রতি সাহাবীর কত গভীর মহব্বত! নবীজীর কথা স্মরণ হলে তাঁকে এক নজর না দেখা পর্যন্ত অস্থিরতা বোধ করেন এবং মৃত্যুর পরে জান্নাতে তাঁকে দেখতে পারবেন কি না তা নিয়েও চিন্তিত।


৩. উহুদের যুদ্ধে শুরুর দিকে মুসলিমদের জয়ের পাল্লা ভারি ছিল। কিন্তু একপর্যায়ে কিছু বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এই সুযোগে কাফেররা নবীজীকে হত্যা করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। কিন্তু কতিপয় সাহাবী জীবন বাজি রেখে নবীজীর সামনে সুদৃঢ় প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে থেকে কাফেরদের আক্রমণ প্রতিহত করেন। এতে তাদের কেউ নিহত কেউ আহত হন।


ওই বীর-সাহসী সাহাবীদের অন্যতম আবু তালহা রা.। তিনি সুদক্ষ তীরন্দাজ ছিলেন। কাফেররা যখন নবীজীকে লক্ষ করে তীর নিক্ষেপ শুরু করে তখন তিনি ঢাল হাতে নিয়ে নবীজীর সামনে প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। নবীজী উঁকি দিয়ে কাফেরদের অবস্থা দেখতে চাইলে তিনি বলতেন


يَا نَبِيَّ اللهِ، بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي، لاَ تُشْرِفْ يُصِيبُكَ سَهْمٌ مِنْ سِهَامِ القَوْمِ، نَحْرِي دُونَ نَحْرِكَ.


হে আল্লাহর নবী! আমার মা-বাবা আপনার ওপর কুরবান হোক। আপনি উঁকি দেবেন না। পাছে আপনার গায়ে কোনো তীর এসে লাগে। আমার বুক আপনার জন্য উৎসর্গিত। সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৮১১


এটা সত্যিকারের ভালবাসার প্রকাশ। নিজে আহত হবেন, নিহত হবেন; কিন্তু প্রেমাষ্পদ যেন নিরাপদ থাকেন। নবীজীকে লক্ষ করে কাফেরদের নিক্ষিপ্ত তীরে সাহাবী নিজে আহত হয়েছেন। নবীজীর গায়ে লাগতে দেননি।


৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু আমের রা.-কে আওতাসের যুদ্ধে পাঠান। যুদ্ধে তার হাঁটুতে তীর বিদ্ধ হয় এবং তিনি শাহাদাত বরণ করেন।


মৃত্যুর আগে তিনি ভাতিজা আবু মূসা আশআরী রা.-কে বলেন


يَا ابْنَ أَخِي! انْطَلِقْ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَقْرِئْهُ مِنِّي السَّلَامَ، وَقُلْ لَهُ: يَقُولُ لَكَ أَبُو عَامِرٍ: اسْتَغْفِرْ لِي.


হে ভাতিজা, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে আমার সালাম জানাও এবং বলো, আবু আমের আপনার কাছে দুআ চেয়েছে।


এ কথা বলার কিছুক্ষণ পর তিনি ইন্তেকাল করেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৯৮


সাহাবীর অন্তরে নবীজীর মহব্বত কত দৃঢ়ভাবে গেঁথেছে! রণাঙ্গনে তীরবিদ্ধ অবস্থায় মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও নবীজীকে স্মরণ করেছেন এবং লোক পাঠিয়ে তাঁর কাছে দুআ চেয়েছেন।


৫. উহুদের যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীকে সা‘দ ইবনে রাবী রা.-এর খোঁজে পাঠান এবং বলেন, তাকে পেলে আমার সালাম জানাবে এবং বলবে, আল্লাহর রাসূল জিজ্ঞেস করেছেন, তুমি কেমন আছ।


ঐ সাহাবী নিহতদের মাঝে সা‘দ রা.-কে এমন অবস্থায় খুঁজে পান যে, শুধু শেষ নিঃশ্বাসটুকু বাকি আছে এবং তার শরীর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত। সাহাবী তাকে নবীজীর কথা জানালেন। তিনি বললেন, আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানাবেন, আমি জান্নাতের সুঘ্রাণ পাচ্ছি। আর আমার সম্প্রদায়কে (অর্থাৎ জীবিত আনসারী সাহাবীদেরকে) বলবেন।


لَا عُذْرَ لَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَنْ يَخْلُصَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِيكُمْ شُفْرٌ يَطْرِفُ.


যদি তোমাদের একজন জীবিত থাকতেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিছু হয়, তাহলে আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো ওজর থাকবে না।


এ কথা বলার পর তিনি ইন্তেকাল করেন। Ñমুসতাদরাকে হাকেম ৩/২০১


নবীজীর প্রতি কী ভালবাসা! রণাঙ্গনে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়েও তাঁর নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।


৬. আমিরুল মুমিনীন উমর রা. নিজ খেলাফত আমলে সাহাবায়ে কেরামের জন্য ভাতা ধার্যকালে উসামা ইবনে যায়েদ রা.-এর জন্য তিন হাজার পাঁচশ দিরহাম আর নিজের ছেলে আবদুল্লাহর জন্য তিন হাজার দিরহাম ধার্য করেন। তখন আবদুল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, আপনি তাকে আমার চেয়ে বেশি দিলেন কেন? সে তো যুদ্ধে আমার চেয়ে অগ্রগামী ছিল না। উত্তরে উমর রা. বললেনÑ


لأَنَّ زَيْدًا كَانَ أَحَبَّ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَبِيكَ، وَكَانَ أُسَامَةُ أَحَبَّ إِلَى رَسُولِ اللهِ مِنْكَ، فَآثَرْتُ حُبَّ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى حُبِّي.


তোমার পিতার চেয়ে তার পিতা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেশি প্রিয় ছিলেন এবং তোমার চেয়ে সে বেশি প্রিয় ছিল। তাই আমার মহব্বতের ওপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বতকে প্রাধান্য দিলাম। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ৩৮১৩ (মূল ঘটনাটি সহীহ ইবনে হিব্বানেও [৭০৪৩] বর্ণিত হয়েছে)


এটা নবীজীর প্রতি উমর রা.-এর সুগভীর ভালবাসার প্রকাশ। এখানে প্রসঙ্গ নবীজীকে সন্তানের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়ার নয়; এটা তো সাহাবীগণের স্বভাবে পরিণত হয়েছিল, বরং এখানে প্রসঙ্গ হল, তিনি একজনকে বেশি মহব্বত করেন আর নবীজী একজনকে বেশি মহব্বত করেন। তো কোন্টা অগ্রাধিকার পাবে? অত্যধিক বিনয়ী আমীরুল মুমিনীন উমর রা. মনে করেছেন তিনি ও তার ছেলের চেয়ে নবীজী যায়েদ ও উসামা রা.-কে বেশি মহব্বত করতেন। সেই হিসেবে নবীজীর ভালবাসাকে অগ্রাধিকার দিয়ে উসামা রা.-কে পাঁচশ দিরহাম বেশি দেন।


৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর আগে মুআয ইবনে জাবাল রা.-কে ইয়ামান প্রেরণ করেন এবং বিদায়ের সময় তাকে কিছুদূর এগিয়ে দেন। এ সময় মুআয রা. সওয়ারীতে ছিলেন আর নবীজী পায়ে হাঁটছিলেন। চলতে চলতে প্রিয় সাহাবীকে তিনি কিছু নসীহত করেন। শেষে বলেনÑ


يَا مُعَاذُ! إِنَّكَ عَسَى أَنْ لَا تَلْقَانِي بَعْدَ عَامِي هَذَا، وَلَعَلَّكَ أنَ تَمُرَّ بِمَسْجِدِي هَذَا، وَقَبْرِي.


হতে পারে এই বছরের পর আমার সঙ্গে তোমার আর সাক্ষাৎ হবে না। তুমি হয়তো আমার মসজিদ ও কবরের পাশ দিয়ে যাবে।


এ কথা শুনে মুআয রা. কাঁদতে শুরু করেন। Ñমুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২০৫২


সত্যিকারের ভালবাসার ক্ষেত্রে এমনই হয়। প্রেমাষ্পদের বিরহের কথা ভাবাই কষ্ট।


৮. মুহাম্মাদ ইবনে যায়েদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ


مَا سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ ذَاكِرًا رَسُولَ اللهِ صَلَّى الله عَلَيه وسَلَّم إِلاَّ ابْتَدَرَتْ عَيْنَاهُ تَبْكِيَانِ.


আমি যখনই (আমার দাদা) আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা আলোচনা করতে দেখেছি, তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরেছে। Ñতবাকাতে ইবনে সা‘দ ৪/৪০৩


এ থেকে বোঝা যায়, সাহাবায়ে কেরাম নবীজীকে অত্যন্ত গভীরভাবে ভালবাসতেন, যার ফলে নবীজী দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পরও তাঁর কথা স্মরণ হলে চোখ ভেঙে অশ্রুধারা নামে। 

ট্রান্সজেন্ডারবাদ : বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।




ট্রান্সজেন্ডারবাদ নামে একটি ঈমান বিধ্বংসী ও শরীয়ত পরিপন্থী এমনকি গোটা মানবতার জন্য ধ্বংসাত্মক মতবাদ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চালু হয়েছে। পাশ্চাত্যের অনেক দেশ, যেখানে এমনিতেই নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ রয়েছে, তারাও এখন এ মতবাদের খপ্পরে পড়েছে এবং এর ভয়াবহ পরিণতিগুলোর মুখোমুখি হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এ চিন্তা-চেতনা ও এ ধরনের কাজ শুধু আখেরাতের কঠিন আযাবেরই কারণ নয়; বরং তা গোটা মানবতার জন্যই হুমকি স্বরূপ। আমাদের এদেশেও কিছু কিছু প্রচার মাধ্যম, এনজিও এবং একটি চিহ্নিত ধর্মবিদ্বেষী শ্রেণি এ মতবাদের প্রচার-প্রসারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা পালন করে চলেছে। যার প্রভাব পড়েছে ক্ষমতাসীন মহলেও। এমনকি ‘ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা আইন ২০২৩ (খসড়া)’ নামে একটি আইন সংসদে পাশের অপেক্ষায় রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।


এহেন প্রেক্ষাপটে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন দেশের সচেতন নাগরিকগণ। তাদের অনেকে দ্বীনী মহলগুলোতে এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করানোর আবেদন-নিবেদন নিয়েও দৌড়াচ্ছেন। এরই প্রেক্ষিতে একটি সম্মিলিত ফতোয়া তৈরির কাজও অগ্রসরমান রয়েছে। সময়ের প্রয়োজন বিবেচনায় ট্রান্সজেন্ডারবাদ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ মাসিক আলকাউসারের পাঠকদের সচেতনতা ও সতর্কতার জন্য পেশ করা হল।

 

সাড়ে ১৬ কোটি জনসংখ্যার এই বাংলাদেশ। যার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা ৯১.০২ শতাংশ। অধিকাংশ মানুষই ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস ও ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে সচেষ্ট। এদেশের আদালতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। প্রকাশ্যে বেহায়াপনা ও অসামাজিক কার্যকলাপ আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু তার পরও এদেশে ধর্ষণ, পরকীয়া ও এর জেরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। প্রিয় পাঠক! চলুন, এ সম্পর্কিত একটি পরিসংখ্যান দেখে নেই।


সময় নিউজ-এ ‘লাইট হাউস’-এর বরাতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে―


২০২২ সালে ধর্ষণের শিকার ৪ হাজার ৩৬০ নারী : লাইট হাউস


দেশে ২০২২ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ হাজার ৩৬০ জন নারী। এর মধ্যে ৪৫০ জনকে আবার ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। একই সময়ে সারা দেশে সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৯ হাজার ৭৬৪ জন নারী। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৩ উপলক্ষে সোমবার (৬ মার্চ) ‘মিডিয়া অ্যাডভোকেসি’ শীর্ষক এক সভায় এসব তথ্য জানায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লাইট হাউস। ―সময় নিউজ, ৬ মার্চ ২০২২


ডেইলি স্টার বাংলার শিরোনাম হল, ‘১০ বছরে দেশে সাড়ে ৯ হাজারের বেশি ধর্ষণ, করোনাকালে সবচেয়ে বেশি।’


মূল সংবাদে বলা হয়েছে, ‘দেশে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৬২৭টি ধর্ষণ হয়েছে ২০২০ সালে। সে বছর দেশে করোনা মহামারি শুরু হয়। বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। ২০১৩ সাল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সময়ে দেশে ৯ হাজার ৬৫৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৩৭৯টি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।... গত ১০ বছরে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৫৭২ জনকে এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ১০৩ জন।...’ ―দ্য ডেইলি স্টার বাংলা, ৬ নভেম্বর ২০২২


এবার হাল আমলের বিশ্বে ঘটে যাওয়া কিছু বিচিত্র সংবাদ দেখে নেওয়া যাক।


গত ৫ জানুয়ারি ২০২৪, কলারোয়া নিউজ-এর প্রকাশিত সংবাদ শিরোনাম―‘কলারোয়ায় দুই কিশোরীর সমকামী প্রেম, বিয়ে করতে অনড়, অবশেষে আটক।’ মূল সংবাদ থেকে জানা যায়, এক বিবাহিত বান্ধবীর প্রেমের টানে সাতক্ষীরার কলারোয়ার এক কিশোরীর কাছে ছুটে আসে সুনামগঞ্জের এক কিশোরী।


দৈনিক সমকালে প্রকাশিত সংবাদে আশুলিয়ার রাকিব হাসান হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই ঢাকা জেলার এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, গ্রেপ্তারের পর চম্পা ওরফে স্বপ্না জানিয়েছেন, তিনি একজন স্বাভাবিক পুরুষ ছিলেন। তাঁর নাম ছিল নওশাদ। তাঁর ১২ বছর বয়সী ছেলে রয়েছে। তবে স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি বিষণ্নতায় ভুগতে থাকেন এবং কর্মবিমুখ হয়ে বেকার জীবনযাপন করেন। ওইসময় দেলু হিজড়ার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। দেলু প্রকৃতপক্ষে স্বাভাবিক পুরুষ। হিজড়া সেজে নানা অপকর্ম করেন। তিনি নওশাদকে হিজড়া হওয়ার প্রস্তাব দেন। দেলু জানান, হিজড়া হলে তিনি সহজে অনেক টাকা আয় করতে পারবেন। সেই সঙ্গে আনন্দ-ফুর্তিতে দিনযাপন করতে পারবেন। তাঁর কথায় প্রলুব্ধ হয়ে নওশাদ হিজড়াদের দলে যোগ দেন। ―দৈনিক সমকাল, ২৮ নভেম্বর ২০২৩


দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম, ‘নারী থেকে পুরুষ হয়েছেন তিনি, এখন জটিলতা বাংলাদেশ রেলওয়ের চাকরিতে’


বিস্তারিত সংবাদে বলা হয়েছে, শারমিন আক্তার ঝিনুক ওরফে ঝিনুক সওদাগর নামের মেয়েটির বর্তমান নাম জিবরান সওদাগর। শুধু নাম পরিবর্তন নয়, অস্ত্রোপচার করে ৩০ বছর বয়সী ঝিনুক এখন একজন পুরুষ। নারী-পুরুষের ফেরে রেলওয়ের চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না তিনি। এক নারীকে ভালোবাসলেও তিনি অন্য পুরুষকে বিয়ে করে সংসারি হয়েছেন। ―দৈনিক প্রথম আলো, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩


মার্কিন টিভি উপস্থাপক ড. ফিলের উপস্থাপনায় একটি টিভি লাইভ শোতে ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় গ্যারি নামের জনৈক বাবা নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি তার ছেলেকে সেখানে প্রথমবারের মতো একজন নারী হিসেবে দেখতে পান।


ইন্টারভিউয়ে গ্যারি বলেন, আমি শুধু ক্ষতিই অনুভব করছি। মনে হচ্ছে, আমি ওকে হারিয়ে ফেলেছি। ...ওকে মেয়ে হিসেবে কীভাবে গ্রহণ করব বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে কোথাও কোনো ভুল হয়েছে।


ড. ফিল প্রশ্ন করলেন, তাহলে কি এটা আপনার দোষ?


জবাবে গ্যারি বলেন, আমি বিশ্বাস করি এটা আমারই দোষ।


এরপর ড. ফিল ইনসাইড ইডিশনকে বলছিলেন, তিনি বিষয়টি উদ্যাপন করছিলেন না। তার কাছে বিষয়টি ছিল এ রকম যে, মানুষ হিসেবে আমি ব্যর্থ। বাবা হিসেবে আমি ব্যর্থ। আমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছি।


উল্লেখ্য, গ্যারির ট্রান্স মেয়ের নাম স্টেফ (Steph)। যে পূর্বে ছেলে ছিল এবং তার নাম ছিল জ্যাক (Zach)। সে একজন বিবাহিত ও মার্কিন সেনা এমপি ছিল। ―ইনসাইড এডিশন, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫


নিউ ইয়র্ক পোস্টে প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল, ‘নিউজার্সি কারাগারে দুই সহবন্দিকে গর্ভবতী করলেন ডেমি মাইনর নামের এক ট্রান্স নারী’


বিস্তারিত সংবাদে বলা হয়েছে, খুনের দায়ে ৩০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ২৭ বছর বয়সী ডেমি মাইনর (Demi Minor) নামের এক ট্রান্স নারীকে মহিলা কারাগারে রাখার পর তার দ্বারা সেখানে দুইজন নারী সহবন্দি গর্ভবতী হওয়ার ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষ তাকে বার্লিংটন কাউন্টিতে অবস্থিত তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের একটি কারাগারে স্থানান্তর করতে বাধ্য হয়েছেন। যেখানে সে একমাত্র নারী হিসেবে আছে। ―নিউ ইয়র্ক পোস্ট, ১৭ জুলাই ২০২২ 


যুক্তরাজ্যের অন্তর্গত দেশ স্কটল্যান্ডে পুরুষ থাকাকালে দুজন নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে একজন ট্রান্স নারীকে গ্রেপ্তারের পর তাকে নারী কারাগারে পাঠানো হয়। এ নিয়ে সেদেশে তোলপাড় শুরু হয়। ―ফক্স নিউজ, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩


সম্প্রতি জাপানের কিয়োটোর অধিবাসী জ্যাকি (Jackie) একটি অ্যামেবা প্রাইম (AMEBA Prime) রিয়েলিটি শোতে তার গল্প শেয়ার করার সময় নিজেকে ২৮ বছরের ট্রান্স-এজ দাবি করেছেন। যার মূল বয়স ৩৯ বছর, জন্ম ৫ জানুয়ারি ১৯৮৪ সালে। ―মাস্ট শেয়ার নিউজ, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩; নেক্সট শার্ক, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩


মেলোডি ওয়াইজহার্ট (Melody Wiseheart) নামের ৫০ বছর বয়সী একজন পুরুষ নিজেকে ট্রান্স-এজ ও ট্রান্স নারী দাবি করে ১৩ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৯ জন তরুণীর সাথে কানাডার একটি আঞ্চলিত সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ―দ্য ওয়েস্টার্ন জার্নাল, ২৭ অক্টোবর ২০২৩; বেরেল নিউজ, ২৪ অক্টোবর ২০২৩


জার্মানির বার্লিন পটসামের প্লাটজ রেলপথ স্টেশনে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রায় ১০০০ মানুষ জড়ো হয়েছিল। যারা নিজেদেরকে ‘কুকুর’ হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করে এবং তারা সেখানে একে অপরের সাথে চিৎকার বা ঘেউ ঘেউ করে যোগাযোগ করছিল। ―নিউ ইয়র্ক পোস্ট, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩; ডেইলি মেইল, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩


ফক্স নিউজ-এর শিরোনাম ‘ট্রান্সজেন্ডার থেকে ট্রান্সঅ্যাবলড : মানুষ এখন নিজেকে প্রতিবন্ধী হিসেবে পরিচিত হওয়াকে বেছে নিচ্ছে।


মূল সংবাদে বলা হয়েছে, বর্তমানে ট্রান্সঅ্যাবলবাদ নামে একটি ঝামেলাপূর্ণ সামাজিক সমস্যা উদ্বেগ তৈরি করছে।


ট্রান্সঅ্যাবলবাদ হল BIID বা বডি ইন্টিগ্রিটি আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার-এর জন্য ব্যবহৃত একটি নতুন পরিভাষা। যেখানে একজন ব্যক্তি নিজেকে প্রতিবন্ধী হিসেবে পরিচয় দেয়। ―ফক্স নিউজ, ২৮ এপ্রিল ২০২৩


জী, পাঠক! এটাই এখন বাস্তবতা!! একদিকে বিশ্ব যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উৎকর্ষের দাবিদার। চাঁদ-মঙ্গল জয় করে মানুষ যখন ছুটছে সমুদ্রের অতলে, ঠিক তখনই কিছু মানুষ নিজের পরিচয় নিয়েই সংশয়ের শিকার। কেউ তো নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের পরিচয় দিচ্ছে, কেউবা আবার কুকুর, প্রতিবন্ধী পরিচয় দিতে পছন্দ করছে।


ট্রান্সজেন্ডারবাদ


বর্তমান বিশ্বে ট্রান্সজেন্ডারবাদ নামে নতুন একটি উদ্ভট মতবাদের সূচনা হয়েছে। যার মূল প্রতিপাদ্য হল, একজন পুরুষের যদি নিজেকে নারী বলে মনে হয় ,তাহলে সে নারী। অনুরূপ কোনো নারীরও যদি নিজেকে পুরুষ মনে হয়, তাহলে সে পুরুষ। সমাজ ও আইন তাদেরকে সে হিসেবেই বিবেচনা করবে। আর তারা চিকিৎসার মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন করারও অধিকার রাখে।


ট্রান্সজেন্ডারবাদের সূচনা


মূলত ১৯৯০ সালের পর থেকে ট্রান্সজেন্ডার তথা জেন্ডার আইডেন্টিটি শব্দটি একটি গোষ্ঠী বা আম্ব্রেলা টার্ম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটা নন-বাইনারি ও এলজিবিটি-এর সমার্থক শব্দ। ১৯৬৫ সালে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সাইক্রিয়াটিস্ট প্রফেসর John F. Oliven ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। এটা (Transsexualismus) জার্মান শব্দ হিসেবে ১৯২৩ সালে প্রথম প্রবর্তন হয়। এরপর এই শব্দের বিবর্তন ঘটে Transsexual হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ছিল। শুরুর দিকে ট্রান্সজেন্ডার বলতে যারা লিঙ্গ পরিবর্তন করতে হরমোন ও সার্জারির আশ্রয় নিত, তাদেরকে বোঝানো হত। ট্রান্সজেন্ডারের সংজ্ঞা এখন অনেক ব্যাপক; এমনকি যারা ক্রসড্রেসার (যারা বিপরীত লিঙ্গের পোশাক ও বেশভূষা গ্রহণকারী অর্থাৎ ছেলে যদি মেয়েদের ড্রেস পরতে আকর্ষিত হয়)।


এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এটা বর্তমানে বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য বা মেডিক্যাল প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে না; মনের ইচ্ছাধীন বিষয়। অর্থাৎ যে কেউ যে কোনো সময় নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার ঘোষণা দিতে পারে। যেদিন থেকে কারো মনে হয় যে, সে জন্মগত লিঙ্গ পরিচয়ে আগ্রহী বা বিশ্বাসী নয়, সেদিন থেকে নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে পরিচয় দিতে পারে। ―ট্রান্সজেন্ডারিজম মতবাদ এবং বিশ্ব প্রেক্ষাপট, ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন, পৃষ্ঠা : ৭-৮


মতবাদটির প্রভাবশালী এক প্রচারক সংস্থার ভাষায়―


Transgender is a term used to describe people whose gender identity differs from the sex they were assigned at birth. Gender identity is a person’s internal, personal sense of being a man or a woman (or boy or girl.) For some people, their gender identity does not fit neatly into those two choices. For transgender people, the sex they were assigned at birth and their own internal gender identity do not match. ...


As part of the transition process, many transgender people are prescribed hormones by their doctors to change their bodies. Some undergo surgeries as well. But not all transgender people can or will take those steps, and it’s important to know that being transgender is not dependent upon medical procedures.


অর্থ : ট্রান্সজেন্ডার একটি পরিভাষা। যার দ্বারা এমন লোকদের বোঝানো হয়, যাদের লিঙ্গ পরিচয় তাদের জন্মের সময় নির্ধারণ হওয়া লিঙ্গ পরিচয় থেকে ভিন্ন। লিঙ্গ পরিচয় হল, সে কি পুরুষ, না নারী―এ ব্যাপারে তার মানসিক বোধ। আর এই শ্রেণির মানুষের সেই মানসিক বোধ তার জন্মের সময় যে লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণ হয়েছিল এর থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। ...আর কিছু কিছু ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি হরমোন থেরাপি গ্রহণ করে থাকে, আবার তাদের কেউ সার্জারিও করে। তবে সব ট্রান্সজেন্ডার এগুলো করে না বা করতে পারে না। এবং এটি জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, লিঙ্গ পরিচয় পরিবর্তন করে ট্রান্সজেন্ডার হওয়া―কোনো চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণের ওপর নির্ভরশীল নয়। দেখুন― https://glaad.org/transgender/transfaq/


ট্রান্সজেন্ডারবাদের শরয়ী দৃষ্টিকোণ নিয়ে আলোচনার পূর্বে জাগতিক বিচারে এর অসারতা, অযৌক্তিকতা ও মানব সম্প্রদায়ের জন্য এর ভয়াবহতা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা দরকার।


পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে কিয়ামত পর্যন্ত আগত গোটা মানব সম্প্রদায়কে আল্লাহ তাআলা পুরুষ ও নারী দুটি শ্রেণিতে ভাগ করে দিয়েছেন। আবার নারী-পুরুষ সৃষ্টির ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পাশাপাশি প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্যও ভিন্ন করে দিয়েছেন। আর নিজ নিজ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব-কর্তব্যের উপযোগী করে নারী-পুরুষের প্রত্যেককে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভিন্ন করে সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেকের জন্য দিয়েছেন পৃথক পৃথক জীবনব্যবস্থা, বিধিবদ্ধ করেছেন শরীয়তে ইসলামীর পৃথক বিধিবিধান। যার ওপর ভিত্তি করেই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রসহ মহাজগতের সবকিছু সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে আবর্তিত হয়ে চলেছে।


বলাবাহুল্য, ট্রান্সজেন্ডারবাদের দাবি অনুযায়ী পৃথিবীতে কোনো লিঙ্গ পরিচয় থাকবে না। শারীরিক লিঙ্গ বিবেচনায় মানুষের পরিচয় নির্ণয় হবে না; বরং মানসিক ইচ্ছাটাই হবে তার প্রধান পরিচয়। কেউ যদি তার জন্মগত লিঙ্গ পরিচয়ে আগ্রহী বা বিশ্বাসী না হয়, তাহলে সে মনের ইচ্ছাধীন যে কোনো সময় নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার ঘোষণা দিতে পারবে। অর্থাৎ একজন পুরুষের যদি নিজেকে নারী বলে মনে হয়, তাহলে সে নারী। অনুরূপ কোনো নারীরও যদি নিজেকে পুরুষ মনে হয়, তাহলে সে পুরুষ।


ভাবতে অবাক লাগে, এটিও একটি মতবাদ হতে পারে! আধুনিক বিশ্বেও ট্রান্সজেন্ডারবাদকে মানুষ মেনে নিতে পারে! আরো অবাক হই, যখন দেখি, এই মতবাদটিকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্য বিশ্ব মোড়লরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে এবং দেশে দেশে এর স্বীকৃতি আদায়ে রীতিমতো চাপ প্রয়োগ করে।


বস্তুত ট্রান্সজেন্ডারবাদ মতবাদটি এতটাই অসার ও অযৌক্তিক যে, এর ফলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র; বরং গোটা পৃথিবীতেই বিপর্যয় নেমে আসবে। যেমন ধরুন, রফিক সাহেবের ৪ মেয়ে। তাদের একটি ছেলের খুব শখ। অনেক দুআ-প্রার্থনার পর তার ঘরে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হল। রফিক সাহেব তো মহা খুশি। এলাকার সবাইকে তিনি দাওয়াত করে খাইয়েছেন। ছেলের আদর-যত্নের যেন কোনো কমতি নেই। ছেলেকে নিয়ে তাদের কত স্বপ্ন! ছেলেকে একটা ভালো স্কুলে ভর্তি করাবেন। লেখাপড়া শেষে ভালো একটা চাকরি করবে। এরপর ছেলেকে বিয়ে করিয়ে বউ ঘরে আনবেন। শেষ বয়সে তারা ছেলে ও ছেলের বউ এবং তাদের নাতি-নাতনি নিয়ে মহাসুখে দিন কাটাবেন। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। ছেলেকে নামকরা একটা স্কুলে ভর্তি করালেন। এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ পেল। ছেলের বন্ধু-বান্ধব, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ এলাকার সবার মুখেই তিনি ছেলের প্রশংসা শোনেন। এমন একটি ছেলের পিতা হতে পেরে নিজেকে তিনি গর্বিত বোধ করেন। কিন্তু ছেলেকে একটা ভালো কলেজে ভর্তি করানোর জন্য রফিক সাহেব যখন খুব উদ্বিগ্ন। ঠিক তখনই যেন তিনি আকাশ থেকে পড়লেন। কারণ একদিন তিনি শুনতে পারলেন, তার ছেলেটি নাকি মেয়ে হয়ে গিয়েছে! এখন থেকে রফিক সাহেবের ছেলের নিজেকে মেয়ে মনে হচ্ছে। তাই আইন ও সমাজসহ সকলের তাকে মেয়ে হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে।


আচ্ছা ধরে নিলাম, সে এখন মেয়ে। সমাজ ও আইনের চোখেও সে এখন থেকে মেয়ে হিসেবেই বিবেচিত হবে। কিন্তু এই বিবেচনাতেই কি সব সমস্যার সমাধান হবে? ধরুন, রফিক সাহেব তাকে মেয়েদের পোশাক পরিয়ে একটা ওমেন্স কলেজে ভর্তি করানোর জন্য নিয়ে গেলেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে আইনী কারণে মেয়ে হিসেবেই বিবেচনা করলেন এবং ভর্তিচ্ছু অন্যান্য মেয়েদের মতো তার শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমাণের জন্য এসএসসির সার্টিফিকেট, মার্কশিট ইত্যাদি কাগজপত্র দেখলেন। কিন্তু সেখানে সবকিছুতেই তো ছেলের নাম লেখা। তাহলে কলেজ কর্তৃপক্ষ কীভাবে নিশ্চিত হবেন যে, এই মেয়েই আগে ছেলে ছিল আর এই সার্টিফিকেট, মার্কশিটসহ সকল কাগজপত্র এই মেয়ের?


হয়তো কেউ সমাধান বাতলে দিতে পারেন যে, কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে তার পূর্বের সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো সংশোধন করে নেবে।


আবার কলেজের পাঠ চুকিয়ে যখন সে ইউনিভার্সিটিতে যাবে, তখন যদি আবার সে নিজেকে ছেলে মনে করে বসে? এমনিভাবে যখন চাকরির সময় হবে তখনো আবার সে নিজেকে মেয়ে মনে করে বসতে পারে। আচ্ছা, তার জীবনের এসব ধাপ ও পর্যায়ের কথা না হয় বাদই দিলাম। ট্রান্সজেন্ডারবাদের দাবি অনুযায়ী, যার যখন নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের মনে হয় তখন থেকেই সে ওই লিঙ্গের বলেই বিবেচিত হবে। এখানে নির্দিষ্ট কোনো সময় বা পর্যায় নেই এবং বিপরীত লিঙ্গের মনে করার নির্দিষ্ট কোনো সীমা-পরিসীমাও নেই। এটাই যদি হয় অবস্থা, তাহলে সবার আগে তার ব্যক্তিগত জীবনটাই প্রভাবিত হবে। কেননা, একটা ছোট্ট ছেলেকে তার বাবা-মা কত যত্ন করে ছেলে হিসেবে প্রতিপালন করেছেন। ছেলেদের যত বিষয়-আশয় থাকে সবকিছু তার জন্য ব্যবস্থা করেছেন। তার কাপড়-চোপড়, পোশাক-আশাক, বন্ধু-বান্ধব ও চলাফেরা সবকিছুই ছিল ছেলেদের মতো। এখন হঠাৎ করে সে মেয়ে হওয়ায় তার পোশাক-পরিচ্ছদ, বন্ধু-বান্ধব, চলাফেরা সবকিছুই পরিবর্তন করতে হবে। আর মেয়ে হিসেবে তার জন্য বাবা-মায়েরও মেয়েদের সকল আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা করতে হবে। কদিন পর যখন আবার সে নিজেকে ছেলে মনে করবে তখন আবার নতুন করে তার জন্য ছেলেদের ব্যবস্থাপনা দরকার হবে।


আচ্ছা, চাকরি-বাকরি কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য করে সে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তার যখন বিয়েশাদির বিষয় আসবে তখন তার অভিভাবকগণ কি তাকে ছেলে মনে করে তার জন্য মেয়ে খুঁজবে, নাকি মেয়ে ভেবে ছেলে খুঁজবে? ধরে নিলাম, অভিভাবকরা বিয়ের সময় তাকে ছেলে মনে করেই তার জন্য পছন্দের একটি মেয়েকে বউ হিসেবে ঘরে আনলেন। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর দুয়েকটি বাচ্চা-কাচ্চা হওয়ার পর যদি ছেলের বউ নিজেকে ছেলে মনে করে কিংবা এই ছেলেই আবার নিজেকে মেয়ে মনে করে বসে?


তাহলে দেখা গেল, এতে ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন প্রভাবিত হওয়ার পাশাপাশি তার সাথে সমাজ ও রাষ্ট্রের আচার-ব্যবহার নিয়েও জটিলতা তৈরি হবে। কেননা, মহল্লার একটি ছেলে যখন সবার সামনে বেড়ে ওঠে। এলাকার সমবয়সী অন্যান্য ছেলেদের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়। এলাকার বড় ভাই, মুরব্বি ও অন্যান্য লোকজনের সাথে তার একটা যোগাযোগ ও সম্পর্ক তৈরি হয়। সবাই তাকে একটি ছেলে হিসেবেই তার সাথে ব্যবহার করে। এখন হঠাৎ করে যদি এই ছেলেটি নিজেকে মেয়ে মনে করার কারণে তাকে মেয়ে বিবেচনা করতে হয়, তাহলে তার এতদিনের বন্ধু-বান্ধব, মুরব্বি ও অন্যান্য লোকজনের সাথে তার সম্পর্কের অবস্থা কী দাঁড়াবে? আবার এলাকার একটি মেয়ে যখন হঠাৎ করে নিজেকে ছেলে মনে করে এবং এলাকার অন্যান্য ছেলেদের সাথে ওঠাবসা করতে থাকে, তাহলে কী অবস্থা দাঁড়াবে?


আর যদি কারো অসৎ উদ্দেশ্য থাকে কিংবা কেউ তার কোনো স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এমনটি করে থাকে, তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্রের অবস্থা তো হবে আরো ভয়াবহ। যেমন, কোনো অসাধু ছেলে যদি কোনো মেয়ের সাথে প্রতারণা করে। তার সাথে সম্পর্কে জড়ায়। কৌশলে তার কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয় এবং তাকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়। এরপর মেয়েটি বিয়ের জন্য চাপ তৈরি করলে ছেলেটি নিজেকে মেয়ে দাবি করে বসল এবং মেয়েটির নামে থানায় নারী নির্যাতনের মামলা ঠুকে দিল। তাহলে এর মীমাংসার কোনো পথ বা উপায় কি কেউ একটু বাতলে দিতে পারবেন?!


মোটকথা, কোনো ছেলে বা মেয়ে যখন তখন নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের মনে করলেই যদি তাকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বিপরীত লিঙ্গের বলেই মেনে নিতে হয়, তাহলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিপর্যয় কোন্ স্তরে গিয়ে পৌঁছবে, কেউ কি তা একটু ভেবে দেখেছেন?


প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতা এড়ানোর জন্য কেউ হয়তো পরামর্শ দেবেন, যখনই কারো বিপরীত লিঙ্গের মনে হবে তখন সাথে সাথেই তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে লিঙ্গ পরিবর্তনের ঘোষণা দেবেন এবং অন্যান্য তথ্য সংশোধন করে নেবেন। জী, এটাও একটা সহজ(?) সমাধান। ডিজিটাল থেকে স্মার্ট দেশে পদার্পণের দাবিদার বাংলাদেশে বর্তমান জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা স্মার্ট কার্ডে কারো নাম ভুল হলে কিংবা ভুল বানান সংশোধনের জন্য যে সময় ও প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হয়, সেখানে সকাল-বিকাল; বরং যখন তখন একজন নাগরিকের তথ্য সংশোধন ও হালনাগাদকরণ সত্যি অনেক সহজ সমাধানই বটে।


আচ্ছা, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট না হয় বাদই দিলাম। কোনো মুসলিম দেশের কথাও না হয় না-ই বললাম। অবাধ মেলামেশার দেশগুলোর কথাই একটু ভেবে দেখুন তো। যেসব দেশে অবাধ মেলামেশা ও বিকৃত উপায়ে প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার সুযোগ থাকে এবং আইনী ও সামাজিকভাবেই তা বৈধ, ঐসব দেশের অবস্থাটাইবা কী হবে? আর অবাধ মেলামেশার দেশ বা সমকামিতাকে আইনীভাবে বৈধতা দেয়া দেশগুলোতেইবা কেন প্রয়োজন পড়বে ট্রান্সজেন্ডারবাদকে প্রতিষ্ঠা করার? সেসব দেশে তো যে কেউ যথেচ্ছভাবে প্রবৃত্তি চরিতার্থের সুযোগ পায়। এর পরও কেন সেখানে ট্রান্সজেন্ডারবাদ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন থাকে? আর সেসব দেশগুলোতে কি আসলেই ট্রান্সজেন্ডারবাদকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া সম্ভব? না। সেসব দেশেও এটাকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া সম্ভব নয়। কেননা, আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে খুনের দায়ে ৩০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ২৭ বছর বয়সী ডেমি মাইনর নামের এক ট্রান্স নারীকে মহিলা কারাগারে রাখার পর তার দ্বারা সেখানে দুইজন নারী সহবন্দি গর্ভবতী হওয়ার ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষ তাকে তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের একটি কারাগারে স্থানান্তর করতে বাধ্য হয়েছেন। 


কেউ হয়তো বলবেন, কারা কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল, ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য পৃথক সেলের ব্যবস্থা করা। আচ্ছা, মেনে নিলাম এটিও একটি সহজ ব্যবস্থা। কিন্তু প্রশ্ন হল, ট্রান্সজেন্ডারদের সবাইকে যদি পৃথক সেলেই রাখা হয়, তাহলে কি এতে ট্রান্সজেন্ডারবাদের প্রতিষ্ঠা হল? কারণ ট্রান্সজেন্ডারবাদের দাবি তো হল, কোনো ছেলে নিজেকে মেয়ে মনে করলে তাকে মেয়ে হিসেবে বিবেচনা করতে হবে আর কোনো মেয়ে নিজেকে ছেলে মনে করলে তাকে ছেলে বিবেচনা করতে হবে। তাহলে বাস্তবে তো তাদের দাবি মানা হল না। তাদেরকে বরং তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবেই বিবেচনা করা হল। তাহলে আদৌ কি ট্রান্সজেন্ডারবাদকে সেসব দেশে প্রতিষ্ঠা দেওয়া সম্ভব?


এবার দেখা যাক, যুক্তির বিচারেও কি ট্রান্সজেন্ডারবাদকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া সম্ভব? না। সাধারণ যুক্তির বিচারেও ট্রান্সজেন্ডারবাদকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া সম্ভব নয়। কেননা আমরা দেখি, মানুষ সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। পুরুষ ও নারী। প্রত্যেকের শরীর ও মন ভিন্ন ভিন্ন। মেয়েরা নিজেকে যতই পুরুষের সমান বলে দাবি করুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে তা কখনও সম্ভব নয়। কারণ শারীরিক গঠন, শক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও মন-মানসিকতায় নারীর পক্ষে কখনও পুরুষের সমান হওয়া সম্ভব নয়। এছাড়াও মেয়েদের রয়েছে বহুবিধ দুর্বলতা। এতকিছুর পরও একজন মেয়ে নিজেকে ছেলে দাবি করলে বা মনে করলেই সে ছেলে হয়ে যেতে পারে না। এমনকি সার্জারি করে ছেলেদের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করলেও এবং হরমোনের পাওয়ারফুল ঔষধ সেবনের পরও তার পক্ষে ছেলের সমান হওয়া সম্ভব নয়। অনুরূপভাবে একজন ছেলে সার্জারির মাধ্যমে মেয়েদের সকল অঙ্গ প্রতিস্থাপন করে নিলেও সে মেয়ে হয়ে যায় না। আর এ কারণেই দেখা যায়, ট্রান্স নারীর সাথে সাধারণ নারীরা পেরে উঠতে পারে না। যেমন, আউট স্পোর্টস নামের একটি ওয়েব সাইটে ২৩ জন ট্রান্স নারীর উল্লেখ করা হয়েছে। যারা বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় মেয়েদের ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে জয়ী হয়েছে। ―আউট স্পোর্টস, ৬ আগস্ট ২০২১


এ কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না যে, একজন ট্রান্স নারী নারীদের ইভেন্টে অংশগ্রহণ করলেও বাস্তবে সে তো পুরুষ। তাই সাধারণ নারীরা তার সাথে পেরে উঠবে কীভাবে? ফলে স্বাভাবিকভাবেই মহিলা ইভেন্টে ট্রান্স নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।


আর সঙ্গত কারণেই অবাধ মেলামেশা ও সমকামিতার দেশ এবং পশ্চিমা দেশগুলোতেও ট্রান্সজেন্ডারবাদকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ঘোষণা দিয়েছেন, কেউ চাইলেই লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারে না। ―দৈনিক প্রথম আলো, ০৬ অক্টোবর ২০২৩


রাশিয়ার সর্বোচ্চ আদালত ‘আন্তর্জাতিক এলজিবিটি পাবলিক মুভমেন্ট’কে একটি চরমপন্থী সংগঠন ঘোষণা করেছে এবং দেশজুড়ে এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। ―বিবিসি, ৩০ নভেম্বর ২০২৩; সিএনএন, ৩০ নভেম্বর ২০২৩; দ্য গার্ডিয়ান, ৩০ নভেম্বর ২০২৩


ফেব্রুয়ারিতে সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে রঙধনু পতাকা বিতরণের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়। ―দ্য ডিপ্লোমেট, ২৮ এপ্রিল ২০২৩; নিউ ইয়র্ক টাইমস, ৩ জুন ২০২৩


উগান্ডায় সমকামিতা আগে থেকেই অবৈধ ছিল। কিন্তু মে মাসে নতুন আইনের মাধ্যমে এর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নির্ধারণ করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক উগান্ডার নতুন ঋণ স্থগিত করেছে। ―বিবিসি নিউজ, ৯ আগস্ট ২০২৩; রয়টার্স, ৯ আগস্ট ২০২৩


মালয়েশিয়ায় সমকামিতা নিষিদ্ধ। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মে মাসে দেশের ১১টি শপিং মলের সোয়াচ স্টোরে এলজিবিটি উপাদান সম্বলিত টাইমপিস উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কেউ এ ধরনের সামগ্রী মুদ্রণ, আমদানি, উৎপাদন করলে ... অথবা কারো কাছে এ ধরনের সামগ্রী পাওয়া গেলে তার ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। আর কেউ এ ধরনের ঘড়ি পরলে বা বিতরণ করলে তার ২০ হাজার রিঙ্গিত জরিমানা হতে পারে। ―দ্য গার্ডিয়ান, ১০ আগস্ট ২০২৩     


কাতার ফুটবল বিশ্বকাপে ট্রান্সজেন্ডারদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ―সিএনএন, ১৯ নভেম্বর ২০২২; দ্য গার্ডিয়ান, ১৩ মে ২০২২


১৯ মে ২০২৩ শুক্রবার পাকিস্তানের ফেডারেল শরীয়ত কোর্ট (এফএসসি) কোনো ব্যক্তি ইচ্ছামতো তার লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারবেন না এবং ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি (অধিকার সুরক্ষা) আইন, ২০১৮-এর কয়েকটি ধারা শরীয়া পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে রায় ঘোষণা করেছে।


ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি (অধিকার সুরক্ষা) আইন, ২০১৮ পাশের পর সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে দায়ের করা পিটিশনের জবাবে আদালত এই রায় প্রদান করেন।


বিস্তারিত রায়ে বলা হয়েছে, আমরা এই উপসংহারে পৌঁছেছি যে, কুরআন ও সুন্নাহর ইসলামী বিধান অনুসারে একজন ব্যক্তির লিঙ্গ তার জৈবিক লিঙ্গের অধীন। সুতরাং একজন ব্যক্তির লিঙ্গ অবশ্যই তার জৈবিক লিঙ্গের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।... 


রায়ে আরো উল্লেখ করা হয় যে, আমরা লক্ষ্য করেছি, ধারা-২ (এন) ও ইমপ্লিমেন্টেড অ্যাক্টের পাঁচটি ভিন্ন পরিভাষা; যথা (১) উভলিঙ্গ, (২) নপুংসক (৩) রূপান্তরকামী পুরুষ, (৪) রূপান্তরকামী নারী এবং (৫) খাজাসিরা ব্যক্তিদেরকে ‘হিজড়া ব্যক্তি’র একই সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ উভলিঙ্গ, নপুংসক ও খাজাসিরা শব্দগুলি কোনো ব্যক্তির যৌন বৈশিষ্ট্যের জৈবিক বৈচিত্র্যকে বোঝায়, যা পুরুষ বা মহিলা শ্রেণিবিন্যাসের সাথে খাপ খায় না। অন্যদিকে রূপান্তরকামী পুরুষ ও রূপান্তরকামী নারী বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝায়, যার স্ব-অনুভূত লিঙ্গ পরিচয় তাদের জন্মের সময় নির্ধারিত লিঙ্গ বা জৈবিকভাবে তাদের লিঙ্গ থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। ―ডন, ১৯ মে ২০২৩


 বোঝা গেল, সাধারণ যুক্তির বিচারেও ট্রান্সজেন্ডারবাদের মতো একটি উদ্ভট ও অসার মতবাদের প্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্ভব নয়।


বস্তুত এটা কোনো মতবাদই নয়; বরং স্রেফ কোনো পাগলের পাগলামি ও তার বিকৃত মন-মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।


ট্রান্সজেন্ডারবাদের শরয়ী দৃষ্টিকোণ


জাগতিক বিচারে ট্রান্সজেন্ডারবাদের অসারতা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর এবার শরীয়তের দৃষ্টিতে ট্রান্সজেন্ডারবাদের অবস্থান আলোচনা করা হচ্ছে।


ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ট্রান্সজেন্ডারবাদ একটি স্পষ্ট কুফরি ও অভিশপ্ত মতবাদ। এতে রয়েছে সৃষ্টির বিকৃতি ও শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়াও এটি সাধারণ রীতি-প্রকৃতি ও ইসলামের সুমহান আদর্শ পরিপন্থী একটি মতবাদ। নিম্নে সংক্ষেপে তা তুলে ধরা হল।


এক. ‘যিনার নিকটেও যেও না’ বিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন


দুনিয়াতে মানুষের বংশধারা অব্যাহত রাখা ও বংশ পরিচয় সংরক্ষণ এবং পরিবার ও সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ইসলাম যেসব যুগান্তকারী বিধান দিয়েছে তার মধ্যে একটি হল যিনা-ব্যভিচার থেকে সর্বতোভাবে বেঁচে থাকা। শুধু ব্যভিচার থেকেই নয়; বরং যেসব কাজকর্ম ও আচার-আচরণ মানুষকে ব্যভিচারে প্রলুব্ধ করে এবং মানুষকে ধীরে ধীরে ব্যভিচারের দিকে ধাবিত করে, সেসব থেকেও বেঁচে থাকার আদেশ করা হয়েছে। কুরআন মাজীদের অমোঘ ঘোষণা―


وَ لَا تَقْرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّهٗ كَانَ فَاحِشَةً وَ سَآءَ سَبِیْلًا.


আর তোমরা যিনার নিকটবর্তীও হয়ো না। নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ। ―সূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ৩২


ইমাম ইবনে কাসীর রাহ. আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, বান্দাদের জন্য ব্যভিচার ও এর নিকটবর্তী হওয়াকে নিষিদ্ধ করে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন―


وَ لَا تَقْرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّهٗ كَانَ فَاحِشَةً وَ سَآءَ سَبِیْلًا.


আর ব্যভিচারের উপকরণ ও উপলক্ষগুলোতে জড়ানোই হল তার নিকটবর্তী হওয়া। ―তাফসীরে ইবনে কাসীর ৫/৭২


উক্ত বিধানটি নিশ্চিত করার জন্য যিনা-ব্যভিচারের সকল উপলক্ষগুলোকেও শরীয়তে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেমন, যিনা-ব্যভিচারের একটি প্রধান উপলক্ষ হল দৃষ্টি। অর্থাৎ কোনো পুরুষ পরনারীকে দেখলে কিংবা কোনো নারী পরপুরুষকে দেখলে তার প্রতি দুর্বলতা তৈরি হতে পারে। মনের অজান্তেই তার প্রতি আকর্ষণ জাগ্রত হতে পারে। যা একসময় ব্যভিচার পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে। তাই পর-নারী পুরুষের পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ ও একে অপরের প্রতি দৃষ্টিপাত করা থেকে বিরত থাকার আদেশ করা হয়েছে। তেমনিভাবে নারীকে পর-পুরুষের সামনে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে―


قُلْ لِّلْمُؤْمِنِیْنَ یَغُضُّوْا مِنْ اَبْصَارِهِمْ وَ یَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْ ذٰلِكَ اَزْكٰی لَهُمْ اِنَّ اللهَ خَبِیْرٌۢ بِمَا یَصْنَعُوْنَ، وَ قُلْ لِّلْمُؤْمِنٰتِ یَغْضُضْنَ مِنْ اَبْصَارِهِنَّ وَ یَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ وَ لَا یُبْدِیْنَ زِیْنَتَهُنَّ اِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَ لْیَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلٰی جُیُوْبِهِنَّ.


মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। এটাই তাদের জন্য উত্তম। তাদের কৃত কার্যকলাপ সম্পর্কে আল্লাহ নিশ্চয়ই অবগত। আর মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে এবং লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। সাধারণত যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত নিজেদের আভরণ প্রদর্শন না করে। আর তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে...। ―সূরা নূর (২৪) : ৩০-৩১


রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন―


لَا يَنْظُرُ الرَّجُلُ إِلَى عَوْرَةِ الرَّجُلِ، وَلَا الْمَرْأَةُ إِلَى عَوْرَةِ الْمَرْأَةِ، وَلَا يُفْضِي الرَّجُلُ إِلَى الرَّجُل فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ، وَلَا تُفْضِي الْمَرْأَةُ إِلَى الْمَرْأَةِ فِي الثَّوْبِ الْوَاحِدِ.


কোনো পুরুষ অপর পুরুষের সতরের দিকে তাকাবে না এবং কোনো নারী অপর নারীর সতরের দিকে তাকাবে না। কোনো পুরুষ এক কাপড়ের নিচে অপর পুরুষের শরীরের সঙ্গে নিজের শরীর লাগাবে না এবং কোনো নারী এক কাপড়ের নিচে অপর নারীর শরীরের সঙ্গে নিজের শরীর লাগাবে না। ―সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৩৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৭৯৩


তেমনিভাবে পর-নারী ও পর-পুরুষের সাথে নির্জনে বা একান্তে অবস্থানকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যা ব্যভিচারের দিকে ধাবিত করে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে―


لاَ يَخْلُوَنّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ.


কোনো পুরুষ যেন অপর নারীর সাথে একান্তে অবস্থান না করে। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ৩০০৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৭৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ২১৬৫


এমনকি নারীকে তার মাহরাম পুরুষ ব্যতীত একাকী কিংবা অন্য নারীর সাথে হজে¦র মতো ফরয বিধান পালন করারও অনুমতি দেওয়া হয়নি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন―


لَا تَحُجّنّ امْرَأَةٌ إِلّا وَمَعَهَا ذُو محْرمٍ.


মাহরাম ব্যতীত কোনো নারী যেন হজ¦ না করে। ―সুনানে দারাকুতনী, হাদীস ২৪৪০


আরো দেখুন, সহীহ বুখারী, হাদীস ৩০০৬


আর সঙ্গত কারণেই সন্তানের বয়স দশ বছর হলে তাদের শয্যা পৃথক করে দেওয়ার আদেশ করা হয়েছে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে―


مُرُوا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ، وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرٍ، وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ.


তোমাদের সন্তানের বয়স সাত বছর হলে তাদেরকে নামাযের আদেশ করো। আর দশ বছর হলে নামাযের জন্য তাদেরকে প্রহার করো এবং তাদের পরস্পরের শয্যা পৃথক করে দাও। ―সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৫


প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ মানুষের এক স্বভাবজাত প্রকৃতি। নির্দিষ্ট সময়ের পর মানুষের মাঝে এই আকর্ষণ জাগ্রত হয়। পৃথিবীর শুরু থেকে সকল যুগে ও সকল ধর্মে এই প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার বিধান ছিল। সর্বশেষ শরীয়ত ইসলামে যেমন ধর্ষণ-ব্যভিচার হারাম ও নিষিদ্ধ তেমনি পূর্ববর্তী ইহুদি, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, হিন্দুসহ সকল ধর্মেও তা নিষিদ্ধ ছিল। দুনিয়ার সাধারণ রীতি, জ্ঞান-যুক্তি ও বিজ্ঞান সকল বিচারেই তা যথার্থ।


ইসলামী শরীয়ত একদিকে যেমন এই আকর্ষণকে নিয়ন্ত্রিত রাখার আদেশ করে অন্যদিকে তা চরিতার্থ করার জন্যও দিয়েছে সুন্দর ও সুমহান বিধান। একদিকে যেমন ঘোষণা হয়েছে―


مَنْ يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الجَنَّةَ.


যে তার দুই চোয়াল ও দুই উরুর মধ্যস্থিত অঙ্গের (জিহ্বা ও লজ্জাস্থান) জামানত দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের যামিন হব। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৭৪


অন্যদিকে ইরশাদ হয়েছে―


يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ! مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ البَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ.


হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের যাদের বিয়ের সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে। আর যার বিয়ের সামর্থ্য নেই, সে যেন রোযা রাখে। কেননা, রোযা তার প্রবৃত্তির চাহিদা প্রশমনকারী। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০৬৫


বস্তুত শরীয়তের এই একটি বিধান যদি নিশ্চিত করা যায় এবং ব্যভিচার ও এর সকল উপলক্ষ থেকে মানুষ নিজেকে সংযত রাখতে পারে, তাহলে ব্যক্তি-পরিবার ও সমাজ-রাষ্ট্রসহ সর্বত্রই শান্তি ও শৃঙ্খলা বিরাজ করবে। সুখী ও সমৃদ্ধ একটি সমাজ গড়ে উঠবে।


পক্ষান্তরে ট্রান্সজেন্ডারবাদ মূলত অবাধ, যথেচ্ছ ও বিকৃত উপায়ে প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার দ্বার উন্মোচন করে। যার ফলে সমাজে সমকামিতা, বেহায়াপনা ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটে। বস্তুত মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে রাখার কোনো সুযোগ তো এতে থাকছেই না; বরং যথেচ্ছ প্রবৃত্তি-চারণের সুযোগ তৈরি হয়।


তাছাড়া ট্রান্সজেন্ডারবাদে সন্তান ধারণ ও সন্তান লালন-পালনের মতো কোনো বিষয় নেই। এগুলো থেকে বরং নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ট্রান্সজেন্ডারবাদ শুধু নিজের প্রবৃত্তিকে যথেচ্ছভাবে উপভোগ করতে শেখায়। সন্তান ধারণ ও লালন-পালনের ঝামেলায় জড়াতে উৎসাহিত করে না। এতে করে একদিকে যেমন দুনিয়ায় মানবের বংশধারা ব্যাহত হবে, তেমনি তার বংশবিস্তারও লোপ পাবে। যার দরুন সমাজ, রাষ্ট্র ও গোটা বিশ্বে এক মহাবিপর্যয় তৈরি হবে। অথচ ইসলামী শরীয়তে মানবের বংশ বৃদ্ধিই কাম্য। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে―


تزوجوا الودود الولود، فإني مكاثر بكم الأمم يوم القيامة.


তোমরা অধিক মহব্বতকারী ও অধিক সন্তান জন্মদানকারী নারীকে বিয়ে করো। কেননা, কিয়ামতের দিন তোমাদের নিয়ে অন্যান্য উম্মতের ওপর আধিক্যের গর্ব করব। ―সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪০২৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৩৫৯৪


দুই. সন্তানের পিতৃ পরিচয় ও বংশ পরিচয় সুরক্ষিত রাখার বিধান লঙ্ঘিত হয়


ইসলামী শরীয়ত সন্তানের পিতৃ পরিচয় ও বংশ পরিচয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং এর জন্য সব রকমের সতর্কতা অবলম্বন করে থাকে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে―


الوَلَدُ لِلْفِرَاشِ، وَلِلْعَاهِرِ الحَجَرُ.


সন্তান হল বৈধ স্ত্রীর জন্য আর ব্যভিচারিণীর জন্য হল বঞ্চনা। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৮১৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪৫৮


একারণে বিবাহ বহির্ভূত মেলামেশা ও ব্যভিচারের মাধ্যমে জন্ম লাভকারী সন্তানকে ইসলাম স্বীকৃতি দেয় না; বরং তার জন্য ইসলামের পৃথক বিধিবিধান রয়েছে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন―


أَيُّمَا رَجُلٍ عَاهَرَ بِحُرَّةٍ أَوْ أَمَةٍ فَالوَلَدُ وَلَدُ زِنَا لَا يَرِثُ وَلَا يُورَثُ.


যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন নারী অথবা বাদীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় (আর এতে কোনো সন্তানের জন্ম হয়) তাহলে সেটা জারজ সন্তান। সে ব্যভিচারী থেকে মিরাস পাবে না এবং ব্যভিচারীও তার থেকে মিরাস পাবে না। ―জামে তিরমিযী, হাদীস ২১১৩


আর সঙ্গত কারণেই ইসলামে পরকীয়া ও বহুগামিতাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন―


قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَيُّ الذَّنْبِ أَعْظَمُ؟ ... قُلْتُ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: أَنْ تُزَانِيَ حَلِيلَةَ جَارِكَ.


আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আরয করলাম, সবচেয়ে মারাত্মক গুনাহ কী?...


আমি আবারো আরয করলাম, এরপর কোন্টি? তিনি বললেন, প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৮১১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৬


রুফাই ইবনে সাবেত আনসারী রা.-এর সূত্রে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন―


لَا يَحِلُّ لِامْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يَسْقِيَ مَاءَه زَرْعَ غَيْرِه، يَعْنِي: إِتْيَانَ الْحُبَالَى.


আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী কোনো ব্যক্তির জন্য অন্যের ক্ষেতে সেচ দেওয়া অর্থাৎ গর্ভবতী নারীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া বৈধ নয়। ―সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২১৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬৯৯৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ১১৩১


পক্ষান্তরে ট্রান্সজেন্ডারবাদে মানবের পিতৃ পরিচয় ও বংশ পরিচয় বলতে কিছুই থাকবে না। কেননা, এই মতবাদ অনুসারে একজন ব্যক্তি ফন্দি খাটিয়ে যখন তখন নিজেকে একেক লিঙ্গের ঘোষণা করে অবাধ বেহায়াপনায় লিপ্ত হতে পারে।


তিন. নারী-পুরুষ একে অপরের নিষিদ্ধ সাদৃশ্য অবলম্বন


ইসলাম নারী-পুরুষকে একে অপরের সাদৃশ্য অবলম্বন করতেও নিষেধ করেছে। এটি জঘন্যতম কবীরা গুনাহ ও লানতযোগ্য কাজ। হাদীসে এ ধরনের নারী ও পুরুষের প্রতি অভিস¤পাত করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর সূত্রে বর্ণিত―


لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم المتشبهين من الرجال بالنساء، والمتشبهات من النساء بالرجال.


আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর সাদৃশ্য ধারণকারী পুরুষ ও পুরুষের সাদৃশ্য ধারণকারী নারীর প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৮৮৫, ৬৮৩৪


আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা.-এর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন―


ليس منا من تشبه بالرجال من النساء، ولا من تشبه بالنساء من الرجال.


পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী নারী ও নারীর সাদৃশ্য অবলম্বনকারী পুরুষ আমাদের দলভুক্ত নয়। ―আলজামিউস সগীর, হাদীস ৭৬৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৮৭৫


বলাবাহুল্য, উপরোক্ত সাদৃশ্য দুই ধরনের হতে পারে। যথা : সাময়িক ও অস্থায়ী এবং স্থায়ী। উভয় প্রকারের সাদৃশ্যই নিষিদ্ধ। সাময়িক সাদৃশ্য সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,


আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন―


لعن الله الواشِمات والمستوشمات، والمتنمصات والمتفلجات للحسن، المغيرات خلق الله... .


সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য উল্কি আঁকিয়ে ও যে এঁকে দিতে বলে, ভ্রূ উত্তোলনকারী নারী ও দাঁত সরু করে মাঝে ফাঁক সৃষ্টিকারী নারীর প্রতি আল্লাহ তাআলা লানত করেছেন। কেননা, এগুলো আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে দেয়। ... ―সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৮৮৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১২৫


আসমা বিনতে আবু বকর রা. বলেন, জনৈকা নারী নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! বসন্ত রোগে আমার এক মেয়ের মাথার চুল পড়ে গিয়েছে। আমি তাকে বিয়ে দিয়েছি। আমি কি তার মাথায় পরচুলা স্থাপন করব? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন―


لعن الله الواصلة والمَوصولة.


 পরচুলা স্থাপনকারী নারী ও পরচুলা ব্যবহারকারী নারীর প্রতি আল্লাহ তাআলার অভিসম্পাত। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৪১


আরো দেখুন, সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৪০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১২৪; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৫০৯৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪১৮০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৬৩


আর স্থায়ী সাদৃশ্য (যা ‘তাবদীলু খালকিল্লাহ’ তথা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে বিকৃতি সাধনের অন্তর্ভুক্ত।) হল, অঙ্গ সংযোজন বা বিয়োজনের মাধ্যমে পুরুষের জন্য নারীর অথবা নারীর জন্য পুরুষের আকৃতি ধারণ করা। যেমন কোনো পুরুষের খোজা হওয়া। ইসলামে এটিও নিষিদ্ধ। 


আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করতাম। আমাদের সঙ্গে স্ত্রীগণ থাকত না। তাই আমরা আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি খোজা হয়ে যাব? তিনি আমাদেরকে তা করতে নিষেধ করেছেন। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০৭১


পক্ষান্তরে ট্রান্সজেন্ডারবাদে এই অভিশপ্ত সাদৃশ্যই ধারণ করা হয়। কখনো অস্থায়ী ও সাময়িক সাদৃশ্য ধারণ করা হয়। যেমন, পুরুষ হয়ে নারীর পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-ব্যবহার, চাল-চলন ইত্যাদি অবলম্বন করা হয়। আবার কখনো সার্জারির মাধ্যমে স্থায়ীভাবে সাদৃশ্য অবলম্বন করা হয়। যেমন, ছেলে হয়ে মেয়ের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করা কিংবা মেয়ে হয়ে ছেলের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা ও নিজের মেয়েলি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অপসারণ করা ইত্যাদি।


চার. ট্রান্সজেন্ডারবাদে রয়েছে আল্লাহর সৃষ্টির বিকৃতি


ট্রান্সজেন্ডারবাদের সবচেয়ে জঘন্য ও গর্হিত দিক হল, এতে আল্লাহর সৃষ্টির বিকৃতি ঘটে। অথচ আল্লাহর সৃষ্টির মাঝে বিকৃতি সাধন সম্পূর্ণ হারাম ও জঘন্যতম কাজ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন―


اِنَّ اللهَ لَا یَغْفِرُ اَنْ یُّشْرَكَ بِهٖ وَ یَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ یَّشَآءُ وَ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلٰلًۢا بَعِیْدًا، اِنْ یَّدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلَّاۤ اِنٰثًا وَ اِنْ یَّدْعُوْنَ اِلَّا شَیْطٰنًا مَّرِیْدًا، لَّعَنَهُ اللهُ وَ قَالَ لَاَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِیْبًا مَّفْرُوْضًا، وَّ لَاُضِلَّنَّهُمْ وَ لَاُمَنِّیَنَّهُمْ وَ لَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَیُبَتِّكُنَّ اٰذَانَ الْاَنْعَامِ وَ لَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَیُغَیِّرُنَّ خَلْقَ اللهِ وَ مَنْ یَّتَّخِذِ الشَّیْطٰنَ وَلِیًّا مِّنْ دُوْنِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِیْنًا، یَعِدُهُمْ وَ یُمَنِّیْهِمْ وَ مَا یَعِدُهُمُ الشَّیْطٰنُ اِلَّا غُرُوْرًا، اُولٰٓىِٕكَ مَاْوٰىهُمْ جَهَنَّمُ وَ لَا یَجِدُوْنَ عَنْهَا مَحِیْصًا.


নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। এটি ব্যতীত যাকে ইচ্ছা সবকিছু ক্ষমা করেন। আর কেউ আল্লাহর সঙ্গে শরীক করলে সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়। তাঁর পরিবর্তে তারা দেবীরই পূজা করে এবং বিদ্রোহী শয়তানেরই পূজা করে। আল্লাহ তাকে লানত করেন। আর সে বলে, আমি অবশ্যই তাদের পথভ্রষ্ট করব। তাদের অন্তরে মিথ্যা আশা-ভরসা সৃষ্টি করব এবং তাদেরকে আদেশ করব, ফলে তারা অবশ্যই পশুর কর্ণচ্ছেদ করবে। তাদেরকে আরো আদেশ করব, ফলে তারা অবশ্যই আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে। আর কেউ আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে স্পষ্টতই ক্ষতিগ্রস্ত। সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং আশা-ভরসা দেয়। আর শয়তান তাদেরকে শুধু প্রবঞ্চনারই প্রতিশ্রুতি দেয়। ওদের বাসস্থান জাহান্নাম এবং তারা সেখান থেকে পলায়নের কোনো পথ পাবে না। ―সূরা নিসা (৪) : ১১৬-১২১


এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবী রাহ. উপরে বর্ণিত হাদীসসমূহ উল্লেখ করার পর বলেন―


وَهَذِه الْأُمُورُ كُلُّهَا قَدْ شَهِدَتِ الْأَحَادِيثُ بِلَعْنِ فَاعِلِهَا، وَأَنَّهَا مِنَ الْكَبَائِرِ. وَاخْتُلِفَ فِي الْمَعْنَى الَّذِي نُهِيَ لِأَجْلِهَا، فَقِيلَ: لِأَنَّهَا مِنْ بَابِ التَّدْلِيسِ. وَقِيلَ: مِنْ بَابِ تَغْيِيرِ خَلْقِ اللَّهِ تَعَالَى، كَمَا قَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ، وَهُوَ أَصَحُّ.


হাদীসসমূহ থেকে সাদৃশ্যের উপরোক্ত সকল কাজ লানতযোগ্য হওয়া ও কবীরা গুনাহ হওয়া প্রতীয়মান হয়। তবে এসব কাজ নিষিদ্ধ হওয়ার পেছনে কী তাৎপর্য রয়েছে, সে সম্পর্কে একাধিক বক্তব্য রয়েছে। কেউ বলেন, এটি তাদলীস। আর কারো মতে, এটি আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির মাঝে বিকৃতি সাধনের অন্তর্ভুক্ত। যেমনটি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. উল্লেখ করেছেন। আর এটিই বিশুদ্ধ মত। ―তাফসীরে কুরতুবী ৫/২৫২; আলমুফহিম লিমা উশকিলা মিন তালখীসি কিতাবি মুসলিম ৫/৪৪৪


পাঁচ. সর্বোপরি ট্রান্সজেন্ডারবাদ একটি ঈমান বিধ্বংসী কুফরি মতবাদ


ট্রান্সজেন্ডারবাদ ইসলাম ও মুসলমানদের মৌলিক আকীদা-বিশ্বাসের পরিপন্থী। কেননা সন্তান হওয়া-না হওয়া, সন্তানের ছেলে বা মেয়ে হওয়া একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিয়ন্ত্রণে। এতে কারো কোনো হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। কোনো চিকিৎসা, বিজ্ঞান, ওষুধ-পথ্য কিংবা কোনো ডাক্তার-কবিরাজের এতে কোনো এখতিয়ার নেই। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন―


لِلهِ مُلْكُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ یَخْلُقُ مَا یَشَآءُ یَهَبُ لِمَنْ یَّشَآءُ اِنَاثًا وَّ یَهَبُ لِمَنْ یَّشَآءُ الذُّكُوْرَ، اَوْ یُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَّ اِنَاثًا وَ یَجْعَلُ مَنْ یَّشَآءُ عَقِیْمًا اِنَّهٗ عَلِیْمٌ قَدِیْرٌ.


নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন আবার যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই। আবার যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। ―সূরা শূরা (৪২) : ৪৯-৫০ 


পক্ষান্তরে ট্রান্সজেন্ডারবাদে যখন তখন ছেলে বা মেয়ে বনে যাওয়ার ধৃষ্টতা দেখানো হয়। যা সৃষ্টির বিকৃতির পাশাপাশি ঈমান বিধ্বংসীও বটে। তাছাড়া ট্রান্সজেন্ডারবাদ প্রতিষ্ঠা পেলে আল্লাহর দেওয়া শরীয়ত ও কুরআন সুন্নাহ্র অসংখ্য বিধানে ব্যাপক পরিবর্তন ও চরম বিকৃতি ঘটবে। এর মাধ্যমে ইসলামের সালাত, হজ¦, বিয়ে, তালাক, ইদ্দত, বংশপরিচয়, পর্দা, সতর, শাহাদাহ (সাক্ষ্যদান), কাযা, ইমামাত (নামাযের ইমামতি), রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া ও মীরাস-উত্তরাধিকারসহ নারী-পুরুষ সংক্রান্ত কুরআন-সুন্নাহ ও ইসলামের বহু বিধানের পরিবর্তন ও বিকৃতি ঘটবে।


আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সুমতি দান করুন। ট্রান্সজেন্ডারবাদের অসারতা ও এর ভয়াবহতা অনুধাবন করার তাওফীক দান করুন। বিশ্বের গোটা মুসলিম উম্মাহ্কে এর ভয়াল গ্রাস থেকে হেফাযত করুন। আর আমাদের দেশের দায়িত্বশীল মহলকে বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করার তাওফীক দান করুন এবং ট্রান্সজেন্ডারবাদের মতো একটি কুফরি ও অভিশপ্ত মতবাদকে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া থেকে তাদেরকে বিরত রাখুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন! 

হিমালয়

  হিমালয় এশিয়ার একটি পর্বতমালা। এটি অনেকগুলো পর্বতের সমন্বয়ে গঠিত, যা তিব্বতীয় মালভূমি থেকে ভারতীয় উপমহাদেশকে পৃথক করেছে। ভূ-তত্ত্ববিদদের ধা...